ওহাইও সংবাদ : বাংলাদেশি ও আমেরিকান কমিউনিটিতে এক পরিচিত নাম মিজানুর রহমান। তিনি সম্প্রতি আর.সি.এইচ.এস.-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২৪শে জুন এই উপলক্ষ্যে একটি জামজমকপূর্ন ইনস্টলেশন ও অ্যাওয়ার্ডস গালা অনুষ্ঠিত হয় লং আইল্যান্ডের দ্য মেট্রোপলিটান রেস্টুরেন্টে। সেই অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও ডেপুটি কনসাল জেনারেল সহ রোটারি ক্লাবের রিজিওনাল নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এই উপলক্ষ্যে যে জার্নালটি প্রকাশিত হয় তাতে নিউয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হুগুল ও বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল অফ নিউয়র্ক, ড. মো: মনিরুল ইসলাম সহ ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের শুভেচ্ছা বাণী ছাপা হয়।
পেশাগতভাবে মিজানুর রহমান দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ফাইনান্সিয়াল এডভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে অনার্স সহ বি.এস. ও এম.এস. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ব্লুমসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি নিজের পেশাগত কৃতিত্বের জন্য অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে এম.ডি.আর.টি. এবং এন.এ.আই.এফ.এ. পুরস্কার। তিনি তার কর্মজীবনের শুরুতে বাংলাদেশে থাকাকালীন ইউ.এস. এইডস-এর একটি সংঘঠন কেয়ার-ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সাব-অফিসে ফাইন্যান্স ও এডমিনিস্ট্রেশনের রক্ষণবেক্ষনের দায়িত্বে প্রজেক্ট সাপোর্ট ম্যানেজার পদে ৪ বছর কাজ করেন।
মিজানুর রহমান আর.সি.এইচ.এস.-এর (RCHS) প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্লাব সেক্রেটারি এবং মিডিয়া ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ক্লাবের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রজেক্ট চেয়ার হিসেবে কাজ করেছেন ষ তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনালের পল হ্যারিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
২৪শে জুনের সেই অনুষ্ঠানটি ছিল ক্লাবের চতুর্দ্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নতুন কমিটির শপথ গ্রহন উপলক্ষ্যে। নতুন প্রেসিডেন্টে হিসেবে মিজানুর রহমান শপথ গ্রহণ করেন এবং বিদায়ী প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে রোটারির প্রথা অনুযায়ী ‘গ্যাভেল’ গ্রহণ করেন। শপথ ও দায়িত্ত্ব গ্রহণের পর তিনি তার শুভেচ্ছা বাণী দেন। তিনি বলেন, আজ আমার ওপর যে দায়িত্ত্ব প্রদান করা হলো, তা আমি পালন করব অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। তিনি বলেন রোটারি ক্লাব অফ হিক্সভিল সাউথের সাথে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন মানুষের সেবায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের ক্লাবে আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন ধরণের যে সমস্ত মানবসেবামূলক প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাচ্ছি তার পাশাপাশি আরও কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণ করার ইচ্ছা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো লং আইল্যান্ডে দক্ষিণ এশীয়দের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করা। আরেকটি প্রকল্প হতে পারে আমরা কিভাবে আমাদের তরুণ সমাজকে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ও ভিডিও গেমস-এর আসক্তি থেকে মুক্ত করে বাস্তবিক সামাজিক কর্মকান্ডে তাদেরকে নিয়ে আসা যায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েরা সোশ্যাল এঞ্জাইটি ও আইসোলেশনে ভুগছে। যার ফলে অনেক ছেলেমেয়েই তাদের কর্মজীবনে সফল হওয়া সত্ত্বেও অবিবাহিত জীবন বা সিঙ্গেল লাইফ বেছে নিচ্ছে। আবার অনেক ইমিগ্র্যান্ট দম্পতি – বিবাহিত বা সম্পর্কিত জীবনে অসুখী জীবন যাপন করছে ষ যদিও সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন ফেসবুকে তাদের হয়তো অনেক হাসিখুশি ফটো দেখা যায়। তাদের অনেকেই এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সামাজিকভাবে সমাধানের কোনো প্রকল্প পাচ্ছেন না।
ঐ অনুষ্ঠানে কীনোট স্পিকার ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান একজন স্বনামধন্য সমাজহিতৌষী ব্যক্তি, জনাব সৈয়দ জাকি হোসেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১.৪ মিলিয়ন বা ১৪ লক্ষ্য রোটারিয়ান রয়েছে। ১৯০৫ সালের যাত্রা শুরু করে একশ আঠারো বছরে তাদের যে অবদান তার কোনো তুলনা নেই। সৈয়দ জাকি বলেন, রোটারির এন্ডাওমেন্ট ফান্ডে এখন ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশী অর্থ জমা আছে। তিনি বলেন, আমার কাছে সুন্দর জীবনের অর্থ হলো, আমি আর্থিকভাবে যে সফলতা অর্জন করেছি, এবং যে জীবন যাপন করছি, তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারা। অন্যের সাথে শেয়ার করলে কাউর জীবনের হ্যাপিনেস কমে যায়না, বরং বাড়ে। তিনি বলেন, একজন মানুষ সবকিছু করতে পারে না, কিন্তু যতটুকুন করতে পারে, সেটুকু করাটাই যথেষ্ট। আমি মনে করি মানুষের সেবা করার কোনো পরিমাপ করা ঠিক না।
সৈয়দ জাকি যখন কীনোট স্পিকারের বক্তব্য রাখছিলেন, তখন মুহুর্মুহু করতালিতে দ্য মেট্রোপলিটানের সুবিশাল হলরুমটি মুখর হয়ে উঠছিলো। এরপর বক্তব্য রাখেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান কোরেশী। তারপর ছিল সম্মাননার পর্ব। আজীবন সম্মাননা জানানো হয় সৈয়দ জাকি হোসেনকে তার অসাধারণ কমিউনিটি সার্ভিস ও মানবসেবার জন্য। এছাড়াও ওয়াল অফ ফেম অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় নীলিমা মদনকে। ভিএস দেব শর্মা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় রেখা গুপ্তাকে। ওপর লাইফটাইম অ্যাওয়ার্ডটি প্রদান করা হয় আর্জেন ভাতিজাকে তার দীর্ঘতম সেবাকাজের জন্য। বানছি শাহ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় আহমেদ খান তারিনকে কোন একটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ পরিমান টাকা অনুদানের জন্য এবং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দেয়া জয় অনু গুলাটিকে।
আপনার মতামত লিখুন :