ওহাইও সংবাদ : অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটির কনভোকেশন ২০২৩। ১৭ জুন শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জর্জ সি. মার্শাল হাইস্কুল মিলনায়তনে ৭৬জন শিক্ষার্থীর হাতে গ্রাজুয়েশন সনদ ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। কালো গাউন মাথায় গ্রাজুয়েশন হ্যাট পরে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসাের সাথে সনদ গ্রহন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউএস রিপ্রেজেন্টে জিম মোরান।
কর্মসূচিটিকে স্রেফ সনদ বিতরণে সীমিত না রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে একটি বিশেষ সেমিনারের। যেখানে আয়োজনের উদ্বোধনী বক্তৃতা রাখেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ।
বক্তৃতায় তিনি তার নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরেন। বলেন সাফলতার পথ কখনো মসৃণ হয় না। প্রতিটি ধাপে ধাপে উত্থান পতনের চ্যালেঞ্জ আসে। কিছু সফলতার শিখরে পৌছাতে হলে সেই চ্যালেঞ্জ মোকালবেলা করতে হবে, কখনো হাড় ছেড়ে দেয়া যাবেনা। বরং আরো দৃড় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবার পরামর্শ রাখেন তিনি।
এরপর কি কি-নোট স্পিকার হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউএস রিপ্রেজেন্টেটিভ জিম মোরান। সনদ গ্রহন করতে আসা গ্র্যাডুয়েডটের উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকটি পরামর্শ রাখেন। বলেন, একজন সফল মানুষ হবার জন্য নিয়মিত শারিরিক ব্যায়াম করা উটিৎ, প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা প্রয়োজন এবং সর্বপূরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেব গড়ে তুলতে হবে।
ডব্লিউইউএসটির সমাবর্তনীর শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। যেটি পড়ে শোনান, বিল ক্লিনটনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বব জে ন্যাশ। চিঠিতে সাবেক ইউএস প্রেসিডেন্ট ডব্লিউইউএসটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। ডব্লিউইউএসটি যেভাবে শিক্ষার সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই সেবা যেন অব্যাহত থাকে তার আহ্বান জানান। আর বিল ক্লিনটন ডব্লিউইউএসিটর গ্রাজুয়েটড শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবর্তনশীল পৃথিবীটাকে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন আপনাদের।
গেস্ট স্পিকার ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফক্সের স্টেট সিনেটর চ্যাপ পিটারসন মাস্টার্স সম্পন্ন করা গ্রাডুয়েটদের যুক্তরাষ্ট্রে শুধু টেক্স পে না করে এই দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করার আহবান জানান। ।
সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির গ্রাজুয়েটদের এবং কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানান ইউএস সিনেট মেজোরিটি লিডার চ্যাক শুমার, কংগ্রেস ম্যান গ্যারি কন্নলী, কনগ্রেস ইউম্যান গ্রেস ম্যাং।
অনুষ্ঠানে অভ্যাগত অতিথি হয়ে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে স্বীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গগণ। এই গ্রাজুয়েশন-কনভোকেশনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি-আমেরিকান জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর শেখ রহমান, মলি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাষ্ট্রি সৈয়দ জাকি হোসেন, টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান, আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইটি উদ্যোক্তা ড. ফয়সাল কাদির, ডব্লিউইউএসটির উপদেষ্টা মো: মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা মো: সিদ্দীক শেখ এবং ডব্লিউইউএসটির সিএফও ফারহানা হানিপ।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্কুল অব বিজনেসের কেলি ডি আলসেন্টারা এবং ইনফরমেশন টেকনোলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত অফুনি এডা আগাদা।
পরে একে একে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির সনদ তুলে দেওয়া হয়। ৭৬ জন মাস্টার্স সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ দেয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাডুয়েট হিসেবে ঘোষণা করেন ডব্লিউইউএসটির প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক। গ্রাজুয়েশন হ্যাট উপরে ছুড়ে তা উদযাপন করেন সমাবর্তনে অংশ নেয়া সবাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম, ড. শ্যান চো, অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর ড. হুয়ান লি ছাড়াও শিক্ষকদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন এই কনভোকেশনে। পুরো অনুষ্ঠানের মাস্টার অব দ্য সেরিমনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা র্যাচেল রোজ।
সনদ বিতরন শেষে অভ্যাগত অতিথিরা যোগ দেন কনভোকেশন ডিনারে। গ্র্যাডুয়েটরা পরিবারের মানুষদের সাথে নানাভাবে ছবি তুলে বিশেষ দিনটিকে স্মৃতিতে তুলে রাখেন। কেউ আবার নেচে গেয়ে দিনটিতে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করেছেন।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ইঞ্জি. আবুবকর হানিপের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাংলাদেশি আমেরিকানের হাতে পরিচালিত প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও এমবিএ- বিবিএ কোর্সে বর্তমানে প্রায় পোনেরশো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। যার মধ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে ৬শর মত। বিশ্বের ১২১ দেশের শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :