একটি সমন্বিত উদ্যোগ যা বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র:


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : জুন ১৪, ২০২৩, ১১:২২ অপরাহ্ণ /
একটি সমন্বিত উদ্যোগ যা বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র:

শফিউল ভূঁইয়া:
সেই আশির দশক থেকে দেখে আসছি, আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা যেন ঘুরছেই ন। দিন যত যাচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেকারত্বের হার কেবল বেড়েই চলেছে। তার সাথে সাথে বাড়ছে
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশ যাত্রার মধ্যে দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর এক প্রানান্ত চেষ্টা। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো রেজাল্ট করা প্রকৌশলীরাও দিনের পর দিন নিষ্ফল চেষ্টা করে করে যাচ্ছে একটা চাকরির আশায়। কিন্তু কেন এমন হবে?

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীনে তো এমনটি হয়নি? বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়ংশ জনগুষ্ঠি এই দুটি দেশে বাস করে। চীন এখন তাদের জনগুষ্ঠীকে এমন ভাবে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে যে, তারা এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়। তবে আমরা কেন নয়? আমাদের তো আঠার কোটি জনগণ? যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে বাংলাদেশীরা বীরদর্পে সুনামের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি গুগল, মাইক্রোসফট, ফেইসবুক, ইন্টেল, নাসা সহ কোথায় নেই বাংলাদেশীরা? এমআইটি, হার্ভার্ট, স্ট্যানফোর্ড সহ সমস্ত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্র-শিক্ষকগণ। তার মানে হচ্ছে, সমস্যাটা মেধার নয়, অন্য জায়গায়। আমরা যারা প্রবাসে থাকি আর যারা দেশে থাকেন, তাদের মধ্যে একটা যথাযথ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমার মনে হয় এই সমস্যার একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব।
আজ আমি শুধু একটা উদ্যোগের কথা বলবো যা আমরা একটু আমলে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারি। করোনা পরবর্তী পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এটা অনেকটা সর্বজনস্বীকৃত যে, সব কাজের জন্য অফিসে যেতে হয়না। যেমন ধরুন আইটি বিষয়ক কাজ। আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সংযুক্ত হয়ে যে কোনো ধরণের কম্পিউটার সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করতে পারি। যত ধরণের ডিজাইন/এনালাইসিস কার্যক্রম রয়েছে, যেমন ধরুন মেকানিক্যাল ডিজাইন, ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন, হাইড্রোলিক/নিউমেটিক ডিজাইন; সকল ধরণের ফাইনাইট ইলেমেন্ট এনালাইসিস, যেমন ধরুন স্ট্রেস এনালাইসিস, থার্মাল ও কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স এনালাইসিস এর সবকিছুই করা যায় পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকে। প্রোডাক্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোন দরকারই পরে না।

আমরা সবাই জানি যে, ইউরোপ, আমেরিকা কানাডা সহ পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশে প্রকৌশলীদের বেতন বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের চেয়ে অনেক বেশী। তাই ওরা অনেকদিন যাবৎ এ সমস্ত কাজের জন্য অন্যান্য দেশ যেখানে ওরা কম টাকায় করাতে পারবে, তা খুঁজে বেড়াচ্ছে। এতে করে ওদের দুটি লাভ: একটা হল ওরা কম টাকায় বেশী কাজ করাতে পারছে আর দ্বিতীয়টা হলো ওদের আর কাজের জন্য প্রকৌশলী খুঁজতে হয় না। আমি যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলতে পারি, ওদের বেকারত্বের হার এই মুহূর্তে ৩.৪ শতাংশ এবং শুধু প্রকৌশীদের
বেকারত্বের হার মাত্র ১.২ শতাংশ। তাই কাজের প্রয়োজনে যথাযথ প্রকৌশলী খুঁজে পাওয়া বড়ই দুরূহ ব্যাপার।
আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ভারতসহ বিশ্বের বহু স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো তাদের বেকারত্বেও সমস্যার সমাধান করে চলেছে।

আমরা বাংলাদেশীরাও অবশ্যই এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। এর জন্যে দরকার পাঁচটি জিনিস: ১. কম্পিউটার। ২. নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। ৩. শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ। ৪. যথাযথ সফটওয়্যার। ৫. প্রশিক্ষিত জনগুষ্ঠি।
যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে যোগ্যতা ভেদে ঘন্টায় ১৫ থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত বেতন দেয় যা বাংলাদেশী টাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। সেই হিসেবে মাসে গিয়ে দাঁড়ায় কমপক্ষে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এতে করে বাংলাদেশের দুটি বড় ধরণের উপকার হবে: ১. বেকার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ। ২. বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন।

আমাদের এই তীব্র বেকার সমস্যা ও ডলার সংকটের এই চরম মুহূর্তে চলুন আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের প্রানপ্রিয় মাতৃভূমিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের এই বেকার ও বৈদেশিক মুদ্রার সমস্যার একটি সুস্পষ্ট সমাধানের দিকে ধাবিত হয়ে আমাদেও দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখি। সেই সাথে আমাদের বাংলাদেশের যুবক ভাইদেরকে দালালদের প্রতারণা থেকে, তথা জীবন বাজী রেখে ট্রলারে করে বিদেশ যাত্রা থেকে বাঁচাই।