ইদানিং তার চোখের সম্স্যা টা বেড়েছে। বেশিক্ষন তাকিয়ে কোন কিছু দেখলে চোখ জালা করে। ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, বল্লেন চোখের লিকুইডিটি কমে যা”েছ। বয়স তো কম হোল না। প্রায় ৫৯ বছর। এই দির্ঘ প্রফেশনাল লাইফে কম প্ররিশ্রম করেন নি। চোখের উপর কম প্রেশার পরেনি। শিক্ষক মানুষরা হয়তো শেষ জিবনে তার মতো ক্ষীন দৃস্টি নিয়ে বেচেঁ থাকেন।
নজরুল সাহেব বাইরে তাকালেন। সন্ধা পার হয়ে গ্যাছে, আধার নেমে গ্যাছে। তার এই নিজস্ব একতলা ফ্লাট বাড়িতে তিনি আর একটা কাজের ছেলে ছাড়া কেউ নেই। তার স্ত্রী গত হয়েছেন ৪ বছর। একটা ছেলে একটা মেয়ে সবাই দেশের বাইরে। তার একাকী জিবন তিনি মেনে নিয়েছেন। সারা জিবন শিক্ষকতা করে যা উপার্জন করেছেন, তা ছেলে মেয়েদের পিছনেই ব্যয় করেছেন। এরা ভালোই আছে। সপ্তাহে ১/২ দিন ফোনে কথা বলে, শরিরে খোজ নেয়, এটুকই।
সেল ফোন টা বেজে উঠলো। নজরুল সাহেব নাম্বার চিনতে পারলেন না। তাকে আননোন নাম্বার দিয়ে ফোন দেওয়ার মত কেউ নাই। তিনি ইতস্তত বোধ করলেন, কে হতে পারে?
অবশেষে রিসিভ করলেন
ঃআস স্লামুআলাইকুম। স্যার আপনি ভালো আছেন। ওপাশ থেকে ভরাট কন্ঠ ভেসে আসলো।
ওলাইকুম আস সালাম। কে তুমি?
ঃ স্যার আমি আপনার ৯৩ ব্যাচের একজন ছাত্র। নাম মকবুল, চিনতে পেরেছেন?
ঃ না মকবুল আমি চিনতে পারিনি। কি প্রয়োজন বাবা?
ঃ স্যার আমি জিহাদের কাছ থেকে এসেছিলাম। আমি অস্ট্রলিয়ায় থাকি।
জিহাদ নজরুল সাহেবের ছেলের নাম। নজরুল সাহেব ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
ঃ তাই নাকি বাবা। তুমি এখন কোথায়?
ঃ আমি আপনার বাসার সামনে।
ঃ আমি আসছি।
নজরুল সাহেব ব্যাস্ত হয়ে ড্রয়িং রুমের দরজা খুল্লেন।
আপাদমস্তক দামী বেশভুষায় মোড়ানো একজন ৩০/৩৫ বছরের যুবক দাড়িয়ে আছে। মুখে স্মিত হাসি।
ঃ আমি মকবুল স্যার।
ঃ ভিতরে এসো বাবা।
মকবুল ভেতরে ঢুকলো।
ঃ বস, আমি একা মানুষ বাবা। তুমি তো জানই, যেহেতু তুমি জিহাদের পরিচিত।
ঃ আপনি ব্যাস্ত হবেন না স্যার। আপনি আমার খুব শ্রদ্ধা ভাজন একজন মানুষ। আমি আমার জিবনে আপনার মত ন্যায় নিতিবান মানুষ খুব কম দেখেছি। মকবুল বসতে বসতে বল্ল।
ঃ হ্যা। তুমি যেহেতু আমার একজন ছাত্র, তাহলে তোমার অবশ্য তা জানার কথা। আমি আমার কর্মজীবনে কাউকে এক বিন্দু ছাড় দেয়নি, অনিয়ম ও করিনি। নজরুল সাহেব বসতে বসতে বল্লেন।
ঃ আমি জানি স্যার। ৯৩ ব্যাচের অনার্স ফাইনালের পরিক্ষায় আপনি একজন ছাত্র কে হল থেকে বহিস্কার করেছিলেন আপনার মনে আছে স্যার?
ঃ হ্যা মনে আছে। ছাত্রটি খুব গুরুতর অপরাধ করেছিল। অন্য একজনের খাতা নিয়ে, সেটা নকল করে লিখছিল । আমার হলে আমি এই রকম অন্যায় কি ভাবে সহ্য করি বল।
ঃ অবশ্যই আমি নিজেও এই ধরনের কাজ ঘৃনা করি স্যার। ঐ ছেলেটির পরে কি হয়েছিল জানেন স্যার ?
ঃ নো। আ ডোন্ট নো। তবে কলেজ কর্তপক্ষ তাকে বহিস্কার করেছিল আমি জানি। নকলবাজ ছেলে সারা জিবন হয়ত অন্য কিছু নকল করে চলছে।
নজরুল সাহেব হাসলেন। আবার বল্লেন
ঃ তুমি অসেট্রলিয়াতে কি কর বাবা?
ঃ আমার ওখানে একটা বিজনেস আছে স্যার। মেলবোর্ন এ।
ঃ বাহ্ । আমার ছাত্র অসেট্রলিয়ায় বিজনসে ম্যান। কত চমৎকার বল। এটা একজন শিক্ষকের জন্য যেমন গর্বের, তার পিতামাতার জন্য ও গর্বের। তোমার বাবা কি ……..
ঃ মারা গেছেন স্যার। আমার বাবা আমার অনার্স ফাইনাল পরিক্ষার আগের দিন মারা যান স্যার। মকবুলের মুখে হসি নেই। আবার বল্ল মকবুল
ঃ আমি ঐ রাত্রে এক ফোটা ঘুমাতে পারিনি, এক কলম লিখতে বা পরতে পারিনি। অধচ কাল আমার জিবনের সবথেকে বড় পরিক্ষা। আমি একান্ত নিরুপায় হয়ে, আসিফের হেল্প নিয়েছিলাম। ও আমার অবস্থা দেখে না করতে পারেনি। আমি ধরা পরে গেলাম আমার ই প্রিয় শিক্ষকের হাতে।
মকবুল হাসলো। নজরুল সাহেব থ মেরে গেলেন। কোনমতে বল্লেন
ঃ তুমি কি সেই…………..
ঃ হ্যা স্যার, আমিই আপনার সেই নকলবাজ ছাত্র। আমি আপনার সামনে একবার আসতে চেয়েছিলাম, আমার আশা পূর্ন হয়েছে। আমি কলেজ থেকে বহিস্কার হয়ে, খুব কস্ট করেছি স্যার। খুব কস্ট আর প্ররিশ্রম করে আজ আমি এই পর্যায়ে এসেছি। আমি তার জন্য আপনাকে কোন দোষ দেই না স্যার। তবে আমার আপনার জন্য কস্ট হচ্ছে স্যার।
ঃ তার মানে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো
ঃ আমার প্রিয়, নীতিবান স্যারের এক মাত্র ছেলে কাল অসেট্রলিয়ান পুলিশের হাতে ধরা পরেছে, অর্থ আত্বসাতের দায়ে। আমি এটাই আপনাকে জানাতে এসেছিলাম। চলি স্যার।
মকবুল বেরিয়ে গেল, রাতের হাওয়া টা বরই শিতল মনে হচ্ছে নজরুল সাহেবের কাছে।
আপনার মতামত লিখুন :