আমি মিতু, বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। দাদিই ছিলেন পরিবারের প্রধান। দাদা মারা গেছেন অনেক আগেই। আমার বাপ চাচা পারিবারিক ব্যবসা চালাতেন। বাবা ও চাচা দাদিকে খুবই সমিহ করে চলতেন। দাদি যা বলতেন তাই হতো বাসার সব ব্যাপারে। এর মধ্যেও চাচা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন চাচিকে কিন্তু চাচি ছিলেন শ্যামলা। একেতো শ্যামলা তার উপর চাচাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করেছেন, এজন্য দাদি চাচিকে তেমন দেখতে পারতেন না। ওগুলো সবই আমার শোনা কথা। দাদি অনেক সুন্দরী ছিলেন এই বয়সেও, ইয়ং বয়সে নিশ্চয় আরো বেশি সুন্দর ছিলেন। ফর্সা, সুন্দর মানুষ দাদির খুব পছন্দ। এই কারনে আমাকে তার বিশেষ পছন্দ। আমি নাকি দেখতে অনেকটা তার মতো। আমি ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি আমি অনেক সুন্দরী, দুধে আলতায় গায়ের রং, ডাগর ডাগর চোখ, টিকালো নাক, এরকম অনেক কিছু। আমার নাকি ভালো পাত্র পেতে কোনো সমস্যাই হবে না। আমার চাচাতো বোন নিতু , আমরা একসাথে এক বাড়িতেই মানুষ হই তব্ওু দাদি যেন আমাকে একটু বেশিই আদর করতেন। সে এটা সেটা আমার জন্য আলাদা করে রাখতেন আর আমার মায়ের মধ্যেও কেমন একটা অহংকার ভাব ছিল এত সুন্দরী মেয়ের মা হতে পেরে। নিতুরা দুই ভাইবোন, কিন্তু নিতুর গায়ের রং চাপা। এ নিয়ে দাদির আক্ষেপের শেষ নেই, কিছু হলেই কথা শুনিয়ে দেন, নিতুর বিয়ে দিতে নাকি চাচা ফকির হয়ে যাবে। আর এসবের জন্য নাকি চাচিই দায়ী। চাচি ওসব কথায় কান না দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতেন, ঘরের টুকটাক কাজে সাহায্য করতে বলতেন। আমাদের অবস্থা বেশ ভালো ছিল, বাসায় দুটো কাজের মানুষ, মা – চাচিও কাজ করতো তারপরও দাদি নিতুকে বিভিন্ন কাজ করতে বলতেন যেন রান্নাবান্না না জানলে ওর ভালো বিয়ে হবে না। দাদি বা অন্য কেউ যখন নিতুর চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করত তখন আমার খারাপ লাগত না বরং মনে মনে খুশি লাগতো, কোথাও যেন একটু অহংকার হতো নিজের রুপের জন্য। কাজ করার ব্যাপারে আমার একদম অনিহা, কোনো কাজ করলে আমার সুন্দর নখগুলো ময়লা হয়ে যাবে, আংগুল গুলো রুক্ষ হয়ে যাবে এই জন্য আমি কাজ করতাম না। মা আমাকে কিছু বলতে আসলে আমি দাদি বা বাবার কাছে কান্নাকাটি করে বিচার দিতাম। পড়াশোনা করার প্রতিও আমার কোনো আগ্রহ হতো না। মা কিছু বলতে আসলে দাদি বলতেন এত পড়ালেখা কইরা করবোটা কি? ওর বাপ চাচার কি কম আছে যে ওরে চাকরি করতে যাইতে অইবো? আমার সাজগোজ করতে খুব ভালো লাগতো, আমি সিনেমা দেখতাম আর নায়িকাদের অনুকরণে সারাদিন সাজগোজ আর রুপচর্চা করে কাটাতাম।
অল্প বয়সেই বুঝতে পারছিলাম চারদিকে আমার অনেক প্রেমিক জুটে যাচ্ছে। আমাকে এক নজর দেখার জন্য যেন তারা বেপরোয়া, আমার খুব মজা লাগতো এসব দেখতে। আশেপাশে প্রেমিকের সংখ্যা বাড়তে লাগলো, স্কুলে, কোচিং এ যাওয়া আসার পথে দাঁড়িয়ে থাকতো, চিঠি দিত, ফুল দিত, বিভিন্ন ধরনের গিফটও দিতো-আমি কাউকেই নিরাশ করতাম না। তাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসতাম। কত জন যে আমার হাসিতে কুপোকাত হয়েছে তার শেষ নেই। মাঝেমধ্যে তাদের কারো কারো সাথে ঘুরতেও যেতাম, হয়তো শপিংয়ে, চাইনিজ এ বা সিনেমা দেখতে, এগুলো অবশ্য অনেক খানিই নির্ভর করতো আমাকে কে কত ভালো গিফট দেয় বা আমার সময়টাকে মজার করে তোলে তার উপর। কারো প্রতি আমার কোনো বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হতো না। ঘুরতে গেলে কেউ যে আমার কাছে আসতে চাইতোনা তা না? বরং সবাই চাইতো কিন্ত ওইসব নিয়ে আমার অত শুচিবাই ছিলো না। ওই হাত ধরা, একটু জড়াজড়ি করে বসে সিনেমা দেখা, চুমুটুমু খাওয়া ওগুলো আমার স্কুল লাইফেই হয়ে গেছে। তাদের এক এক জনের ভালোবাসার কথা, কাছে পাবার প্রবল ইচ্ছা, এগুলোকে আমি খুব ইনজয় করতাম। আগেই বলেছি আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল তারপরও ওই বয়সে আমি এমন সব গিফট পেতাম বা আমার কাছে এমন সব জিনিস ছিল যা অনেকের কাছেই ঈর্ষনিও। ততদিনে আমি বুঝে গেছি আমার রুপ হচ্ছে এমন এক হাতিয়ার যা দিয়ে সব কিছুই হাসিল করা যায়। তাই আমি নিজেকে আরো বেশি গ্রুম করতাম। আমি বেশ লম্বা, ধারালো ফিগার, ঝলমলে উজ্জ্বল চুল আর চেহারার কথাতো আগেই বলেছি সব মিলিয়ে মেয়েদের হিংসার কারন ছিলাম আর ছেলেদের কাছে ড্রিমগার্ল।
কিন্তু স্কুল শেষ করতে না করতেই বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করল, বাবা হয়তো চাইতেন আমি আরও একটু বড় হই বা আরেকটু পড়াশোনা করি কিন্তু মা বুঝেছিলেন আমাকে দিয়ে পড়াশোনা হবে না তাছাড়া মা হয়তো বুঝতে পেরেরছিলেন পাড়ার ছেলেদের অনেকের নজর আমার উপর আর আমি কোনো অঘটন ঘটানোর আগে আমাকে বিয়ে দিতে পারলেই ভালো। দাদিও বললেন ভালো ছেলে পাইলে বিয়ে দিয়ে দিতে-এরকম আগুন টাইপের মেয়ে ঘরে বেশিদিন না রাখাই ভালো। ওদিকে নিতু আমার সমবয়সি হওয়া সত্বেও ওর বিয়ে নিয়ে কোনো কথাই হয় না। ও পড়াশোনায় খুব ভালো আর চাচা-চাচি দুজনেই চায় ও আরো পড়াশোনা করুক যদিও দাদি মাঝে মাঝেই বলে পড়ালেখা শিখে করবোটা কি? বয়স হয়ে গেলে কি মেয়েরে কেউ বিয়া করব এমনেই তো কালো, তখন কি ঘরের খুটি বানাইবা মেয়েরে দিয়া? যাই হোক আমরা যখন কলেজ পরিক্ষা দিব তখন আমার বিয়ে ঠিক হলো। ছেলে ভালো, বাবার সাথে ব্যাবসা করে,গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে ওদের, বাড়ি গাড়ি আছে, আর কি চাই। আমিও বেচে গেলাম, কলেজের পরিক্ষাটা দিতে হলো না।
অনেক ছেলের হৃদয় ভেঙে দিয়ে বেশ ধুমধাম করে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমরা থাইল্যান্ড থেকে হানিমুন করে আসলাম। এদিক সেদিক অনেক ঘুরলাম, দাওয়াত খেয়ে বেড়ালাম সব ভালোই চলছিল কিন্তু আমার হাসবেন্ড আস্তে আস্তে ব্যাস্ত হয়ে গেল তার অফিস নিয়ে। মাঝেমধ্যে তার অফিসের পার্টিতে নিয়ে যায়, দেশি-বিদেশি অনেকেই থাকে পার্টিতে। সবার নজর থাকে আমার উপর, আমার বেশ ভালোই লাগে, আমি হেসে হেসে তাদের সাথে কথা বলি। তারা আমাকে মাঝে মাঝেই ম্যাসেজ পাঠায়, আমার রুপের প্রশংসা করে, আমার মতো একজনের জন্য তারা কি কি করতে পারে সেসব বলে, এভাবে আমার সময় ভালোই কাটে। কিন্তু আমার হাসবেন্ড বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করে আমি অত মিশলাম কেন, এটা বললাম কেন? ওটা করলাম কেন? আমার খুব বিরক্ত লাগে, ঝগড়া হয়।
এদিকে আমি সারাদিন থাকি ঘরে তার উপর শাশুড়ী বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে বলেন, মাঝেমধ্যে রান্নাও করতে বলেন। এসব আমি পারি না ভালোও লাগে না, কেমন যেন নিজেকে বন্দী বন্দী লাগে। ইচ্ছেমতো সিনেমায় বা শপিং এ যেতে পারি না, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা করতে পারি না। শাশুড়ী বলেন কাজ না পারলে আসো শিখায়ে দেই, আমারতো শিখতেও ইচ্ছা করে না, আমিতো বুঝেই পাই না আমাকে কেন কাজ করতে হবে? কাজের মানুষ দিয়ে করালেই তো হয়। কোথাও যেতে হলে শাশুড়ীকে জানিয়ে যেতে হবে, তিনি একশোটা প্রশ্ন করবেন কোথায় যাবো? কেন যাবো? কিছু কিনতে গেলে টাকা চাইতে হয় জামাই এর কাছে সেখানেও প্রশ্ন টাকা দিয়ে কি করবো? এত টাকা কেন লাগবে? আমি দিনে দিনে বিরক্ত হতে লাগলাম, এসব নিয়ে জামাইয়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া লাগে, ঝগড়া করে প্রায়ই আমি বাবার বাড়ি চলে আসি।
বাবার বাড়িতে আমি আমার মতো করেই বলি আমি কতটা কষ্ট করছি শ্বশুর বাড়িতে। আমার হাসবেন্ড আমার রাগ ভাংগাতে চেষ্টা করে, আমাকে নিয়ে যাবার জন্য আসে। বাড়ির সবাই বুঝায় ওকে, আমাকেও, এভাবেই চলতে থাকে। আমার শাশুড়িও নাছোড়বান্দার মত আমাকে সংসার ধর্ম শেখাতে চেষ্টা করেন হয়ত কিছুটা বিরক্তও আমার উপর, একদিন বলেই ফেললেন শুধু সাজগোজ নিয়ে পড়ে থাকলে হবে সংসারের সব কাজ বুঝে নিতে হবেতো। তাছাড়া বাচ্চা হলে বাচ্চা পালবে কিভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমারও অনেক রাগ হলো তাই বলেই ফেললাম যদি কাজ করানোর জন্যই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন তাহলে একটা কাজের মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতেন আমার মতো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করিয়েছেন কেন? আর যদি আরো দু-একটা কাজের মানুষ লাগেতো বলেন আমার বাবাকে বলব তাদের খরচ দিতে। শাশুড়ীও রেগে গেলেন অনেক কথাই বললেন, আমি রাগ করে বাবার বাসায় চলে এসেছিলাম কিন্তু এবার অনেক দিন হলেও আমার হাসবেন্ড আর আমাকে নিতে আসলো না, ফোনও করলো না। কিছুদিন পর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলো। বিয়ের দু বছরের মধ্যেই আমার ডিভোর্স হয়ে গেলো। একটু অবাক হয়েছিলাম আমার মতো সুন্দরী মেয়েকে কেউ ডিভোর্স দিতে পারে? আমিও মনে মনে বললাম দুনিয়াতে ছেলের কি অভাব হইছে যে তার মতো ছেলের সাথেই সংসার করতে হবে? কিন্তু এই প্রথম দেখলাম আমার পরিবারের সবাই কেমন বিরক্ত আমার উপর। দুদিন না যেতেই দাদিই বললেন অত রুপ দিয়া কি অইব যদি জামাই ধরেই রাখতে না পারি? মা-বাবাও দুঃখ করে, এর আগে এই পরিবারে কারো ডিভোর্স হয় নাই। মানুষ কি বলবে? তাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল এই সব।
এদিকে নিতু চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ে, সেখানেই হোস্টেলে থাকে। ওর সাথে দেখা সাক্ষাত হয় না কিন্তু বাসার সবাই দেখি ওর বেশ প্রশংসা করে এমনকি দাদিও। আমার রাগ হয় এসব দেখে। আমি বাসার সবার সাথে কম কথা বলি কিন্তু আমার বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে গেল তারা আমাকে নিয়মিত ম্যাসেজ পাঠায়। আমি বিবাহিত বলে যারা সরাসরি অনেক কথা আকার ইংগিতে বলেছিল তারা এখন সরাসরি অনেক কথা বলে, বিভিন্ন রিসোর্ট বা বিদেশ নিয়ে যেতে চায় কিন্তু বাসায় কি বলবো, এই জন্য কোথাও যাওয়া হয় না কিন্তু আমি বেছে বেছে দু- একজন শিল্পপতি বা বড় ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করি হোটেলে যাই, তারা আমাকে বিভিন্ন গিফট দেয়, শপিং করিয়ে দেয় এমনকি ক্রডিট কার্ডও ধরিয়ে দেয়। আমাকে আলাদা ফ্লাট নেওয়ার কথাও বলে, গাড়ি দিতে চায় কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না বাসায় কি বলবো।
এদিকে বাসায়ও হাজার প্রশ্ন এতো সাজগোজ করে কই যাই, কি করি? কত আর মিথ্যা বলা যায়। একদিন বাবা কারো কাছে কিছু শুনে এসে মাকে বলাতে মা আমাকে চড়-থাপ্পড় মারলেন, অনেক আজেবাজে কথা বললেন। এরপর শুরু হলো আবারও পাত্র দেখা। বাবা কিছুদিনের মধ্যেই এক পাত্র জোগাড় করে ফেললেন, পাত্র বেশ বড়লোক কিন্তু বয়স একটু বেশি। আমার অবশ্য এসবে কিছু যায় আসে না। মনে হলো এ বাসা থেকে বের হওয়া জরুরি। শুরু হলো আমার নতুন সংসার। হাসবেন্ড প্রথমেই বলে দিলো তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই, এই সংসারটাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নাও। সংসারে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, তিনি খুব রাশভারী লোক, সবাই তাকে বেশ ভয় পায়, তিনি বেশ ব্যস্ত থাকেন, অনেকটা সময় বিদেশে বিদেশে কাটান, আমিও যাই মাঝেমধ্যে তার সাথে। আমিও বুঝেছিলাম এবার আমাকে অনেক সাবধানেই থাকতে হবে। বাবা মার কাছে কোনভাবেই ফিরে যাওয়া যাবে না। তাই আমিও চেষ্টা করলাম ভালোভাবে সংসার করতে। যদিও তেমন ঝামেলা ছিল না, শ্বশুর শ্বাশুড়ি কেউ নেই, বাড়িতে একাই থাকতাম। কাজের মানুষেরাই সব কাজ করতো। আমার হাসবেন্ড কখন অফিসে যায় কখন ফেরে কি খায় এসব নিয়ে আমার অত মাথাব্যথা নাই। এভাবেই চলছিল সব কিন্ত একা একা ভালো লাগে না, সময় কাটে না, তাকে বলতেই সে বলল বেবি নিয়ে নিতে। কিন্তু আমি একদম রাজি ছিলাম না, একেতো আমার ফিগার নষ্ট হবে তার উপর এই বাচ্চা কাচ্চার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। বিয়ের তিন বছরের মাথায় আমি প্রেগন্যান্ট হলাম। আমি একদম চাচ্ছিলাম না এখনি মা হতে কিন্তু তাকে দেখলাম সে বাচ্চাদের মতো খুশি। এর মধ্যে সে আমার নামে ফ্ল্যাট কিনেছে, গাড়ি কিনে দিয়েছে, ব্যাংকেও একটা ভালো এমাউন্ট জমেছে। তার এই খুশি দেখে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না, আমার বাবার বাড়িতেও সবাই অনেক খুশি। আমি কাউকে কিছু না জানিয়ে এবরশন করিয়ে আসলাম। হাসবেন্ড কে জানালাম বাথরুমে পড়ে গিয়ে এবরশন হয়েছে। সে খুব কষ্ট পেল মনে হয়। কথাবার্তা বলা একদমই কমিয়ে দিল। আমারও অফুরন্ত অবসর। তাই আবারো অনলাইন ফ্রেন্ডশিপ আর ঘোরাঘুরিতে বিজি হয়ে গেলাম।
এদিকে নিতু ডাক্তারি পাশ করেছে, তার বিয়ে হলো এক বিসিএস অফিসার এর সাথে বেশ ধুমধাম করে। নিতু নিজেও বিসিএস দিয়ে সরকারি ডাক্তার হয়ে গেল। আমরা সবাই মিলে খুব মজার সময় কাটালাম কয়েকদিন কিন্তু নিতু ও নিতুর হাসবেন্ড কে আমার খুব সাধারণ মনে হলো। আমি খুব দামি শাড়ি, ঘহনা পরে পার্লার থেকে সেজেগুজে নিতুর বিয়েতে এটেন্ড করলাম, সবার নজর আমার দিকে হলেও বেশ অবাক হলাম নিতুর হাসবেন্ড কে দেখে সে খুব মুগ্ধ হয়ে নিতুকে দেখছে আর কি যেন বলছে নিতুকে, নিতু বেশ লজ্জা পাচ্ছে আর লাজুক লাজুক হাসি দিচ্ছে। আমার অহংকারের কোথায় যেন লাগলো, আমি নিতুকে দামি একসেট গহনা গিফট দিয়ে চলে আসলাম। নিতুদের দুজনের পোস্টিং চাট্টগ্রামে তাই আর দেখা হয়নি। তাছাড়া আমার স্ট্যাটাস নিতুর স্ট্যাটাস এর সাথে ম্যাচ খায় না তাই আমি আর তেমন খোঁজ খবর নেই নি। ও চেষ্টা করলেও এভয়েড করে গেছি। তাই যোগাযোগটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যদিও মার কাছ থেকে কিছু কিছু শুনতাম। ওর কথা মনে হলেই চোখে ভাসে ওর কথা মনে হলেই চোখে ভাসতো ওর হাসবেন্ড এর সেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা। আমি হিসাব মিলাতে পারতাম না খুব সাধারণ একটা শ্যামলা মেয়ে, যে সাজগোজ জানে না, অত স্মার্ট না তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানোর কি আছে।
কিছুদিন পর আমার হাসবেন্ড কিভাবে কিভাবে যেন সব জেনে গেল আমার ব্যাপারে। এবরশনের কথা, আমার বন্ধুদের কথা, সে ভয়ংকর রেগে গেলো, আমার গায়ে হাত তুলতেও ছাড়লো না। মা- বাবাকে ডেকে সব জানালো।
তারপর বাবা-মার সাথে আমাকে পাঠিয়ে দিলো। বাবা-মাও ক্ষেপে অনেক কথা শুনালো। আমিও আর থাকতে চাচ্ছিলাম না কারো সাথে থাকতে, নিজের ফ্লাটে উঠলাম, কেউ আমার খোঁজ রাখলো না আমিও কারো সাথে যোগাযোগ রাখলাম না। আমি হাসবেন্ড এর কাছে ক্ষমা চাইনি। সেও আমাকে আর ডাকেনি। একদিন দেখা করে ডিভোর্স নিয়ে নিলাম। এরপর শুরু হলো আমার একা থাকা, দেখা গেলো যারা আমাকে অনেক পছন্দ করতো তারা আমার সাথে ঘুরতে যেতে চাইলেও ঘরের বউ করতে রাজি নয়, বেশিরভাগতো বিবাহিতই ছিল। আমিও বিয়ের প্রতি আগ্রহী নই। যদিও এখন আমি আরো পরিনত, আমার চোখের ভাষায়, শরীরের চলন বলনে এক নেশা ছড়ায়। সেই নেশায় কতজন যে ধরাশায়ী। কেটে গেছে আরো পাচ বছর, আমার ভিতরে ক্লান্তি, বিষন্নতা ও হতাশা দানা বাধছিল। এবার সত্যি সত্যি স্থির হতে চাচ্ছিলাম, তাই আবারো বিয়ে করেছি নিজের থেকে বয়সে বেশ বড় ডিভোর্সী একজনকে। উদার হাতে টাকা পয়সা খরচ করে লোকটা, বেশ ফূর্তিবাজ, পার্টিতে যাওয়া, ড্রিংক করা খুব স্বাভাবিক। আমাকে নিয়ে যায় বিভিন্ন পার্টিতে সবাইকে দেখিয়ে মজা পায় এরকম স্মার্ট, সুন্দরী, তার থেকে অনেক কম বয়সের বউকে। সবার সামনে সে আমার অনেক প্রশংসা করে কিন্তু বাড়িতে সে অন্য রকম। যেন চেনেই না আমাকে, রাগ উঠলে ভয়ংকর হয়ে যায়, আজেবাজে গালিগালাজ করে। কয়েকদিন আগেই আমাকে বলল আমি নাকি মাকাল ফল, ইডিয়ট একটা। পরে জানতে পারলাম তার ব্যবসার কোনো এক প্রজেক্ট আটকে গেছে কোনো এক সরকারি কর্মকর্তা তার ফাইল সাইন করছে না তাই। সে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এমনকি অন্য কর্মকর্তাদের যা দেয় তার ডাবল দিয়েও কাজ হচ্ছে না। আমি সেই কর্মকর্তার নাম শুনে অবাক হয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম এতো নিতুর হাসবেন্ড। তারা ঢাকায় বদলি হয়ে এসেছে। আমার সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল সেই মুগ্ধ হওয়া চোখের কথা। আমার মধ্যে কি এক ঘোর কাজ করলো জানি না, মনে হলো নিতুর মতো সাধারণ এক মেয়েকে দেখে যে অত মুগ্ধ হতে পারে সে আমাকে দেখলে কি করবে, আমার জন্য মুগ্ধতা দেখতে চাই ওই চোখে। আর আমার হাসবেন্ডকেউ দেখাতে চাই এত বড় ব্যাবসায়ী হয়ে যা করতে পারে নাই আমি আমার এক ঝলক দিয়েই তা করতে পারি। আমি ভালোমতো খোঁজ নিয়ে জানলাম নিতু সন্ধ্যা রাতে চেম্বারে থাকে আর তখন ওর হাসবেন্ড বাসায় থাকে। আমার আলমারিতে রাখা সারি সারি তাক থেকে বেস্ট দেখে একটা পাতলা শিফন শাড়ী বেছে নিলাম। ডিপ করে কাটা ভি নেকের ব্লাউজ যার পিছনটা পুরোটাই উন্মুক্ত। ডায়মন্ডের হালকা জুয়েলারি দিয়ে সাজলাম। আয়নায় নিজেকে দেখলাম ছিপছিপে শরীর, কোথাও বাড়তি মেদ নেই, কি অপুর্ব লাগছে, আমার থেকে চোখ সরানো কঠিন হবে যে কোন পুরুষ এর জন্যেই। আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো, সেন্ট মেখে বাসার সবচেয়ে দামি গাড়িটা নিয়ে চলে গেলাম নিতুর বাসায়। দরজা খুলল নিতুর হাসবেন্ড। বোঝাই যাচ্ছে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে। আমি পরিচয় দিয়ে তাকে হাগ করতে যেতেই সে সরে গিয়ে বলল চিনতে পেরেছে। বললো নিতু চেম্বারে, আসতে হয়তো সময় লাগবে, বসতে বললো, আমি তার পাশে যেয়ে বসলাম। অবাক হলাম এতবড় একজন অফিসার যে কি না বড় বড় ব্যাবসায়ীদের ধরা খায়াচ্ছে কি সাধারণ তার জীবন। সাধারণ একটা ফ্লাট, আমার ডুপ্লেক্স সিস্টেমের বড় ফ্লাটটার কাছে এটা অনেক ছোট। আমি হাসিতে, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতেই বলল আপনি বসুন আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসি। আমি ইচ্ছা করেই তার হাত ধরে বললাম আমাকে তুমি করেই বল, আমি নিতুর চেয়ে মাত্র ২৪ দিনের বড়। আমি আরো অবাক হয়ে বললাম তুমি কফি বানাবে মানে কি? কাজের মানুষ নাই? সে বলল আছে ছুটা বুয়া দিনের বেলা সব কাজ করে দিয়ে যায় বাকিটা স্বামী-স্ত্রী মিলে সামাল দেয়। সে বলল বাচ্চাদের ঘুমের সময় হয়ে গেছে আমি একটু দেখে আসি। আমি নিতুর বাসা দেখছিলাম। দেওয়ালে কয়েকটি ফ্যামিলি ফটো-ছোট দুইটা বাচ্চা ও স্বামী-স্ত্রী। খুব দামি কিছু নাই ফ্লাটে কিন্তু ছিম ছাম গুছানো।
বেশ কিছুক্ষন পরে আমি রান্নাঘরে শব্দ পেয়ে উকি দিয়ে দেখলাম সে কফি বানাচ্ছে। আমি তার কাছে যেয়ে বললাম তোমাকে করতে হবে না দাও আমি বানাই। সে হাসতে হাসতে বলল কোনো সমস্যা নাই বরং নিতু যদি জানে তার বোন বেড়াতে এসেছে আর আমি তাকে দিয়ে কফি বানিয়েছি তাহলে আমার খবর আছে। আমি তার কাছে গিয়ে জোর করে হাত থেকে কাপ নিয়ে নিলাম এর মধ্যেই কলিং বেলের শব্ধ শুনে সে দরজা খুলতে গেল। আমি রান্নাঘরের দরজা থেকে উকি দিয়ে দেখলাম নিতু এসেছে, সে তাকে জড়িয়ে ধরলো, নিতু রাগী রাগী গলায় বলল তোমার এ স্বভাব কবে যাবে বলোতো? কতবার বলেছি চেম্বার থেকে ফিরলে কাছে আসবে না শরীরে জীবানু থাকে। সে বলল তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমারও ইউমিনিটি তৈরি হয়ে গেছে, যাও তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে এসো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। নিতু বাচ্চাদের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল খাবার খাইয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। কথা শেষ হবার আগেই দুই বাচ্চা তাদের রুম থেকে আম্মু এসেছে আম্মু এসছে বলতে বলতে নিতুকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই একসাথে হেসে উঠল, নিতু জিজ্ঞেস করল তোরা এখনো ঘুমাস নি? বাচ্চারা বলল তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, নিতুর হাসবেন্ডও বলল আমিও। কি সুন্দর লাগছিলো ওদের, আমার কেমন যেন কষ্ট লাগছিলো এসব দেখে। আমাকে দেখে নিতু খুবই অবাক হয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তার কত কথা! কেমন আছি, কোথায় আছি, কেন যোগাযোগ করি না ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে ওর হাসবেন্ড বাচ্চাদের নিয়ে গেল কিছুক্ষন পর এসে আমাদের কফি দিয়ে বলে গেল তোমরা কফি খেতে খেতে গল্প কর আমি খাবারগুলো গরম করি। নিতু বলল দাড়াও আমি তোমাকে সাহায্য করি। সে হেসে বলল সব সময়ই তো কর, অনেকদিন পর দুইবোন এক হয়েছো একটু বসে গল্প কর, সমস্যা নাই। আমি নিতুর সাথে গল্প করছিলাম, সত্যি বলতে শুনছিলাম আর দেখছিলাম কি সাবলীলভাবে ওর হাসবেন্ড টেবিল সাজাচ্ছে।
নিতুকে অনেক উচ্ছ্বাসিত মনে হচ্ছিল। নিতু তার সংসারের গল্প বলছিল, বাচ্চাদের কথা বলছিল, ওর হাসবেন্ড কতটা সাপোর্টিভ সেটাও বলছিল। ওর হাসবেন্ডও বলল নিতু কতটা কষ্ট করে সংসারের জন্য, তার জন্য। আমি আজও দুজনের জন্য দুজনের চোখে মুগ্ধতা দেখলাম। সাথে একজনের জন্য আরেক জনের সন্মান। আজ আমার বুকের ক্লিভেজ এ কারো দৃষ্টি আটকে যায়নি, খোলা পিঠ, উন্মুক্ত কোমড়, কোনো আবেদন তৈরি করেনি। আমার চুলের সুবাসে, চলনবলন বা চোখের ভাষায় কেউ মোহিত হয় নি বরং ছোট্ট এই ফ্লাটের কানায় কানায় কি যেন পরিপূর্ণ ছিল যা আমার জীবনে কোথাও ছিল না। আমার ভিতরে কেমন জ্বলে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিলো ওরকম দুটো বাচ্চা যেন আমারও চাই, কেউ আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে ডুবে থাকুক, কেউ সম্মান এর সাথে ভালোবাসুক। আমার নিজেকে কেমন ছোট মনে হতে লাগলো যেন কাদা লেগে গেছে আমার সারা শরীরে। মনে হলে আমি হেরে গেছি, শুন্য হয়ে গেছি, যেন পৃথিবীতে একা হয়ে গেছি। আমার বাড়ি গাড়ি, শাড়ি গহনা, ব্যাংক ব্যলেন্স সব ফিকে মনে হলো নিতুর জীবনের কাছে। আমি ফিরে আসলাম আমার বাড়িতে, শুন্য ঘরে, রিক্ত হয়ে যে ঘরে আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না।
আপনার মতামত লিখুন :