অরুন্ধতী সরকার, ওহাইও সংবাদ: গত ১৮ই মার্চ বেঙ্গলি আমেরিকান লিবেরাল আর্টস (বালা) স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ও অভিভাবক-অভিভাবিকাগণের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নর্থল্যান্ড হাইস্কুলে এক অভিনব অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে। শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বালা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং উপস্থিত অন্যান্য সকলে। বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলান উপস্থিত সকলে। এরপর প্রায় ৪ ঘণ্টা ব্যাপী নানা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাঙালি এবং অবাঙালি শিল্পীরা নিজেদের মাতৃভাষার ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। সাথে সান্ধ্য ভোজের ব্যাবস্থাও করা হয়।
২০০৯ সাল থেকে শুরু করে গত ১৪ বছর ধরে বহু স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাঙলা ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত করার গুরু দায়িত্ব পালন করে চলেছে বালা। বালা সমস্ত মাতৃভাষার সমান কদর করে তবে মূলত বাঙলার প্রসারই তাদের অন্যতম লক্ষ্য। ওহাইওর কলাম্বাস শহরে এর প্রধান কর্মক্ষেত্র হলেও কোভিড কালে ২০২০ সাল থেকে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে সমস্ত নর্থ আমেরিকার ছাত্র ছাত্রীর কাছেই বালা পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বাঙালি অভিবাসীরা যাতে ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ র ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও অন্যান্য শহীদদের বলিদানকে স্মরণ করতে পারে তাই প্রতিবছরই বালা এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিভিন্ন নাচে-গানে-আবৃত্তিতে স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পী ও অভিভাবক অভিভাবিকারা যোগদান করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইন্দ্রাণী মুখার্জী ও সৌমিত্র মুখার্জী। স্থানীয় ছাত্রছাত্রীরা শ্রীমতী জয়শ্রী বড়ুয়ার নির্দেশনায় “তুলির জীবন” নামক একটি নৃত্য নাট্য পরিবেশন করে। এরপর ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের ছাত্র ছাত্রীরা ভিডিওর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন আবৃত্তি পরিবেশন করে। সান্ধ্য ভোজের বিরতির পর সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধের সূচনা হয়।
অতিথি শিল্পী ক্রিস্টোফার ও ডেভিডের নাচ ও গানের চমৎকার যুগলবন্দীর পর শ্রীমতী জয়শ্রী বড়ুয়ার নির্দেশনায় বাঙালি বেশভূষার ক্রমবিবর্তন নিয়ে মঞ্চস্থ হয়, “বাঙালির বেশভূষণ: Bengali fashion over the Centuries”। কলমে নির্দেশিকা স্বয়ং শ্রীমতী বড়ুয়া। আদিযুগ, মধ্যযুগ, বর্তমান যুগ তথা প্রতিটি যুগান্তরের পোশাক ও আভরণ সম্পর্কিত এত বিস্তারিত ও সূক্ষ্ম বর্ণনা দর্শককে ঋদ্ধ করে।
নাচে-গানে-কবিতায়-অভিনয়ে এক অনন্য আনন্দমুখর সন্ধ্যার সুসমাপ্তি ঘটে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনার দায়ভার বহন করেন তানজিলা খান ও এবেন কেনাহ।
বালার প্রতিষ্ঠাতা জাহিদ হোসেন সমবেত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এই উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য এবং বালার ছাত্রছাত্রীদের আগামী দিনে বাঙলা ভাষা ও তার সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত হতে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য। তিনি আরও জানান যে প্রযুক্তি-প্রেমী নব প্রজন্মকে সহজে বাঙলা শিখতে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁরা একটি নতুন App নিয়ে এসেছেন, “BALA BORNOMALA” । তাঁদের আশা বালা স্কুলের ক্রমবর্ধমান পরিধি Sunday School এর সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের সর্বত্র অভিবাসী বাঙালি শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের হৃদয় স্পর্শ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :