রাশিদা কামালের বিশতম বই এর মোড়ক উন্মোচন


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : মার্চ ১৪, ২০২৩, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ /
রাশিদা কামালের বিশতম বই এর মোড়ক উন্মোচন

ওহাইও সংবাদ : মোড়ক উন্মোচন কথাটার সাথে লেখক আর পাঠক উভয়েরই আবেগ জড়িয়ে থাকে। এ আবেগ শিহরণের! নতুন বইয়ের পাতায় পাতায় একটা বিশেষ ঘ্রাণ থাকে—থাকে কাহিনির বৈচিত্র। আর এ ঘ্রাণের উষ্ণতা, কাহিনির বিচিত্রতা সবাইকে আকর্ষণ করে ভীষণভাবে।

গত এগারোই ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটায় রাশিদা কামালের ‘তোমার হাওয়ায় হাওয়ায়’ বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে ধানমন্ডির ‘চিত্রক’ গ্যালারিতে। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পী খুশি কবির। বিশেষ অতিথির পদ অলংকৃত করেন খ্যাতিমান ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। শিল্পী মনিরুজ্জামান ও শিল্পী রোকসানা সাঈদা পপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে অল্প সময়ের মধ্যেই। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্পী মনিরুজ্জামান, শিল্পী রোকসানা সাঈদা পপি, শিল্পী আইভি জামান, শিল্পী খুশি কবীর ও রাশিদা কামাল।
রোকসানা সাঈদা ওঁর বক্তব্যে বলেন, রাশিদা কামাল একজন জীবন ঘনিষ্ঠ লেখক। চারপাশে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনাই তাঁর লেখার অনুষঙ্গ। সমাজের অসংলগ্ন বিষয়কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তুলে ধরে সমাজের অচলায়তন ভাঙতে চান তিনি।

বর্তমানে তিনি থাকেন আমেরিকার ওহাইও স্টেটের কলম্বাস শহরে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার যখনই তিনি লিখতে বসেন তখনই ওঁর উত্তরার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদীটা সামনে এসে দাঁড়ায়। শীতকালে হাঁটু জলের নদীটা হঠাৎই যৌবনবতী হয়। ঢেউ তোলে—ঢেউগুলি ভেঙে পড়ে দুপাশের ঘাসজমিগুলি ভিজিয়ে দেয়। মেপেল আর গোলাপ লিলির ঝাঁড়ের পাশে নদীটা যে কখন এসে দাঁড়ায় তা কেবল তিনিই অনুভব করেন! মেপেলের দোদুল্যমান পাতা আর নদীর বুকের কুঁচিকুঁচি ঢেউ একাকার হয়ে যায়। কমলা পায়ে হাঁসেরা সাঁতার কাটে সে নদীতে। দিগন্তরেখার দিকে তাকিয়ে লেখকের মনে হয় ওই তো নদীটা বয়ে চলেছে! নদীর পাড়ে আছে গোলাপ লিলির ঝাঁড়! তখন ওঁর কাছে মনে হয় কলম্বাসে নয়, তিনি যেন বাংলাদেশের কোথাও আছেন। কাঁঠালের ছায়াঘেরা , শিউলির গন্ধেভরা বাংলাদেশ! এখানে বসেই তিনি প্রাক শারদীয় গন্ধে মাতাল হন —- আপ্লুত হন।

শিল্পী আইভি জামান বলেন, রাশিদা কামালের সব বইই আমি পড়েছি। অসাধারণ লেখেন তিনি। সমাজের খুঁটিনাটি বিষয়কে অসাধারণত্ত্ব দান করেন। যে সব বিষয় আমাদের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মনেই হয় না যে কোন উপন্যাস পড়ছি, মনে হয় যেন জীবনের কথাগুলিই নতুন করে পড়ছি! শিল্পী মনিরুজ্জামান বলেন, ভাষা সহজ ও সাবলীল। সবাই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। অনেকটা আলাপচারিতার মতো। এ কারণেই ওঁর লেখা জীবনঘনিষ্ঠ।
প্রধান অতিথি শিল্পী খুশি কবীর বলেন, যুগের পরিবর্তন হলেও সমাজের পরিবর্তন তেমন একটা হয় নি! রাশিদা কামাল ওঁর লেখায় সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের কথা তুলে ধরতে চাইছেন। সে অর্থে তিনি সমাজ সেবা করছেন।
রাশিদা কামাল ওর দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন, আমি সাধারণ একজন লেখক। অভিনবত্ব কিছু নেই আমার মধ্যে। সমাজের ছোটবড় অসঙ্গতি আমাকে কষ্ট দেয়। এই অসঙ্গতি দূর করার প্রয়াসে লেখালেখির শুরু। তিনি আরও বলেন, আমার লেখায় নারী পুরুষ উভয়েই বলিষ্ঠ।

তিনি এ উপন্যাসের মূল কথা সংক্ষেপে তুলে ধরে বলেন, এ কাহিনির মূল চরিত্র দীপা আর নাসিব। তবে রাকা আর বাবুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাহিনির বিস্তার। রাকা আর দীপা দুবোন। বাবা নেই। তাই মা নাফিসা আর দীপা ওকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু রাকা বাবুর সাথে প্রেমে জড়িয়ে বাবুর ইচ্ছেতেই ওকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়ে ছিলো। বাবুর মা এ বিয়ে মেনে নিলো না। ফলে অপমান আর অপদস্তের খড়গ নেমে এলো রাকার ওপর। এর প্রভাব পড়লো দীপারও ওপর। নিজের অজান্তেই দীপা হয়ে উঠলো পুরুষ বিদ্বেষী। ওর কেবলই মনে হতো বাবুর জন্যই ওরা রাকাকে হারিয়েছে। আর বাবু রাকাকেও সুখি করতে পারে নি। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও দীপার জীবনে নাসিব নামের এক বেপরোয়া যুবকের আগমন ঘটে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই বেপরোয়া যুবক দীপার পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়। চারপাশের এসব সাধারণ ঘটনাই রাশিদা কামালকে উজ্জীবিত করে ।

‘তোমার হাওয়ায় হাওয়া ‘
লেখকের বিশতম বই। চমৎকার পরিবেশে আর গুণীজনের সান্নিধ্যে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে শিল্পী মনিরুজ্জামান ও শিল্পী রোকসানা সাঈদা পপি লেখকের সমৃদ্ধি কামনা করে বলেন, লেখক যেন এ ধরনের বই উপহার দিয়ে সমাজ ও সমাজের মানুষকে ঋদ্ধ করেন। প্রাণবন্ত পরিবেশ ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি ঘটে ।