উপহার হিসেবে বই


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ১০:৪৯ অপরাহ্ণ /
উপহার হিসেবে বই

ফারুক হোসেন

আমাদের শৈশবে দেখেছি, উৎসবে, অনুষ্ঠানে, বিশেষ দিবসে,এমনকি বিয়েতে বই উপহার দেয়া হতো। খুব বেশী আগে নয়, ষাটের দশকেও আমার মনে আছে, বিয়ের দিন আসার আগেই পাত্র তড়িঘড়ি করে একটি বুকসেলফ ম্যানেজ করে নিলো। তার ধারণা, বিয়েতে বেশ অনেক বই উপহার পাওয়া যাবে। আর বইগুলো কিধরণের হবে তার প্রতি অধীর আগ্রহ ছিলো বরের। বরের ছিলো উপন্যাস পড়ার শখ। তাই তার প্রত্যাশা ভালো কটা উপন্যাস যেনো উপহার পাওয়া যায়। অথ্যাৎ বই ছিলো প্রত্যাশিত উপহার। বাবা কিংবা দাদা তাকিয়ে থাকতেন, মুখসুদোল মুমেনিন অথবা কুরআন শরীফ অথবা কুরআনের অনুবাদ অথবা ইসলামি বই উপহার পাওয়া যায় কিনা, তাহলে ওটা নেবেন তিনি। এইসব বই নিজেও কেনা যায়, তারপরও একটি উপহার হিসেবে বইয়ের প্রতি যে অনুরাগ তা ছিলো নির্মল ও স্বচ্ছ। বইয়ের মলাটের ভেতর উপহারদাতা যা লিখতেন সেখানে ছিলো মুন্সিয়ানার প্রকাশের একটি প¬্যাটফরম। কতটা রোমান্টিক, কতটা শব্দের কৌশল, কতটা আবেগের প্রবাহ ঢেলে দেয়া যায় তার চেষ্টা ছিলো উপহারদাতার মধ্যে। ক্রমশঃ বই নিয়ে এতসব আগ্রহ, বইয়ের প্রতি কদর মিলিয়ে যা”েছ বৈষয়িক উপহারের চাকচিক্যে। চোখকাড়া মোড়কের ভেতর সংসারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে দাতা হচ্ছেন সন্তষ্ট। গ্রহীতা হচ্ছেন খুশী। ইদানীং আর সামগ্রীও চলেনা। চলে টাকা। সুদৃশ্য খামে ক্যাশ টাকা উপহার দেয়া হয়। সেটি গ্রহীতার আর্থিক অবস্থার সংকটে সহায়ক হয়ে ওঠে। এইভাবে উপহার হয়ে উঠেছে অনুদান। উপহারে সৌন্দর্য আর আবেগের দিকটি হয়ে উঠেছে উপেক্ষিত। আবার কোথাও কোথাও উপহারে বড়ো অংকের টাকা যুক্ত করার প্রতিযোগিতাও চলে। কে কত বড় উপহার দিয়ে গ্রহীতার কাছে ভালো হবেন তারও প্রতিযোগিতা চলে ক্ষেত্রবিশেষে। ওটা একধরনের তোঁয়াজ। খয়ের খাঁ এইধরনের কাজ করতে অভ্যস্ত।

এমন ঘটনাও একসময় ঘটেছে। বর-কনের এংগেজমেন্ট। কনের বাড়িতে এসেছে বরপক্ষের মেহমান। মেহমানরা সঙ্গে বয়ে নিয়ে এসেছে বরের শুভেচ্ছা আর সঙ্গে সুন্দর করে মোড়ক করা একটি বই । তখন ফুলের এতটা প্রচলন শুরু হয়নি। বইটি কনের হাতে দিতেই কনে এক সীমাহীন ভালো লাগার আবহে হারিয়ে গেলে। অনুরণিত হলো তার অস্তিত্ব। বইটি লজ্জ্বানত ভঙ্গিতে টেনে অতি যত্নে কাছে রাখলো পরম মনোযোগে। অনুষ্ঠান শেষ হলে নীরবে একান্তে কনে মোড়ক সরিয়ে দেখলো ভালোবাসার বার্তাবাহী বইটি। অনুষ্ঠানে ইয়ার্কি করে অনেকেই বলেছে, নে গো নে, ”স্বামী স্ত্রীর প্রেম কাহিনী”, অথবা ”পরস্পরের প্রতি স্বামী স্ত্রীর ভুমিকা”। কনে খুলে দেখলো আসলে তা নয়, বইটি ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস। বর আগেই জেনে নিয়েছিলো কনে ফাল্গুনীর উপন্যাস পড়ে। অসম্ভব ভালো লাগায় ভালোবাসার পাহাড় বানিয়ে দিলো বইটি। গভীর আবেগে ওইরাতেই বইটি পড়ে ফেলেছে কনে। আজকের কনে কি সেই ভালো লাগা খুঁজে পায় বইয়ের মধ্যে ? এখন ফুল জায়গা করে নিয়েছে, জায়গা করে নিয়েছে সোনা বা ডায়মন্ডের অলংকার। বই হয়েছে একেবারেই উপেক্ষিত।

মায়ের কোলে শিশুকে ঘুম পাড়াতে মাকে শোনাতে হয় গল্প বা কবিতা বা ছড়া। মাকে তাই জানতে হয় গল্প কিংবা ছড়া। আর মা বই থেকে সেই সব রপ্ত করে প্রস্তুতি নেন তার খোকাকে ঘুম পাড়াবার জন্য। আর শিশুটি যখন পড়তে শুরু করতো তখন তার বন্ধু হতো বই। পড়তো সে বই থেকে ছোট ছোট গল্প বা ছড়া মজার মজার। আর এটাকেই কেন্দ্র করে প্রথম জন্মদিনের উপহার আসতো বই। মা খুশী হতেন বই পেলে। নিজেও পড়তেন আর আশা করতেন পড়তে শিখলেই তার শিশুটি এই গল্পের বইটি পড়বে। আজ বই পেলে মা আর খুশী হননা। একপাহাড় উপহারের মধ্যে যদি কেই বই দিয়ে থাকে, সেটি হয় তুচ্ছ তাচ্ছিল্যেও উপকরণ। আহারে বই-বলা হয় অকারণেই দেয়া হলো। অপ্রয়োজনেই বোঝা হলো। এটি সংরক্ষণ করা এখন কষ্টের ব্যাপার হয়ে গেলো। ঘরে সব জিনিসের জায়গা হয় বইয়ের হয়না। বই এখন বোঝা। বইয়ের জায়গায় নানা কালচারের ডেকোরেশন সামগ্রী সাজিয়ে রাখতে পারলেই গৃহকর্তৃ খুশী। বই ঘরকে ভারী করে দিচ্ছে। বানিয়ে রেখেছে ঘিঞ্জি। অনেক ঘরেই বই সংগ্রহ এবং সাজিয়ে রাখার কারণে বই প্রেমিক হয়েছেন নিগৃহীত। উপহার নয় অপহারের উপাদান আজ যেনো বই।

বই উপহার দিন-চিৎকার করে এখন একথা বলতে হয়। সরকারী খামের উপর স্ট্যাম্প মেরে লিখে দেয়া হয়-প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সরকারী চিঠিপত্রের হেডে লেখা আছে বই উপহার দিন। অথ্যাৎ, সরকার/রাষ্ট্র মনে করিয়ে দিচ্ছে বই উপহার হিসেবে মন্দ নয়। বই বর্ষ ঘোষণাও করেছে সরকার। ওই বছর নানাভাবে বইয়ের কদর সম্পর্কে বলাও হয়েছে। লেখকরা লাইন ধরে সরকার প্রধানকে বই উপহার দিয়েছেন। বইয়ের প্রতি সবাইকে সজাগ করার জন্য নেয়া হয়েছিলো নানা কর্মসূচিও। বইকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সারা দেশে রয়েছে গ্রন্থাগার। সেখানে বই বিতরণের জন্য সরকার নিজে বই কিনে পাঠাচ্ছেন বছর বছর। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বই কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকার। উদ্দেশ্য বই কাছে পেলে পাঠক পড়বেই। সরকারের বই ক্রয়ের প্রবণতা দেখে অনেকেই লেখক হয়ে উঠেছেন। সেইসব লেখক বেছে নিয়েছেন সস্তা বাজারী বিষয়। বই বিক্রি করে গাড়ি কিনেছেন বাড়ি কিনেছেন তারা। কিন্তু পাঠক বাড়েনি। বইযে গুদামে এসেছে ঢুকেছে সেই গুদামেই রয়ে গেছে। যারপরনাই চেষ্ট করেও বইকে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে পৌঁছানোর চেষ্টা সফল হয়েছে বলা যাবেনা।

অথচ বই হচ্ছে সেরা উপহার। মর্যাদার দিক থেকে বইয়ের সঙ্গে আর কোন উপহার কি তুলনা করা চলে। সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লেখা, আকর্ষণীয় মলাটে মোড়ানো, উন্নতমানের কাগজে ছাপা, প্রমান সাইজের একটি বই উপহার পেলে যে অনুভূতি, সেটি কি অন্য কিছুতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কুরআন যখন উপহার হিসেবে দিয়ে অভিনন্দিত করা হয় গ্রহীতাকে, তার কাছে তখন কি আর কোন কিছু কি এর চেয়ে মূল্যবান হতে পারে। ধর্মীয় বইও উপহার হিসেবে অনেকের কাছে দারুণ প্রত্যাশিত। আজ সেটিও উঠে যাচ্ছে। প্রিয় ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখা একটি বই পেলে কি আনন্দই না হতো আগে। যেমন ধরুন আব্রাহাম লিংকন, মাও সে তুং, আইনস্টাইন, মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী,অথবা বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে লেখা একটি বইকি গ্রহীতার জন্য আনন্দেও নয়? কিন্তু এখন উপহারকে ভাবা হয় মূল্যমানের দিক থেকে। প্রয়োজনে এটি নিজেই কিনে নেবেন উপহার গ্রহীতা। তার চাই বৈষয়িক নানা কাজে ব্যবহার্য কোন জিনিস। যাতে অন্যজনের কাছে বলা যায় কে কি দিয়েছেন। বই উপহার পেলে আজ আর বলা যায়না। সবাই দেবে সোনা। আমি কি করে বই দেবো। অপ্রয়োজনীয় একটি দ্রব্য। এরকম মনস্তাত্বিক সমস্যায় ভোগেন উপহাদাতা।

বইয়ে উৎসর্গ ছিলো এক দর্শন। বইয়ের বিষয়বস্তু, লেখকের সঙ্গে সম্পর্ক, সময়ের প্রেক্ষিত বিবেচনা করে লেখক উৎসর্গ করতেন তার বই। তৈরী হতো এক নিবিড় সম্পর্ক লেখকের সাথে উৎসর্গীকৃত ব্যক্তির সঙ্গে। এই সম্পর্ক চিরদিনের চিরসময়ের এক অমলিন সম্পর্ক। এই সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চাইতেও বেশী ঘনিষ্ঠ। বই অনুরাগী আর কোন প্রাপ্তিতে এতটা খুশী হয়েছেন কিনা বলা কঠিন। বইটি যেনো তার , তার নিজের সৃষ্টি, একেবারেই নিজের সত্বের মধ্যে, এরকম ভাবনা উৎসর্গীকৃত পাঠক আবেগে বইটি আগলে রাখেন। যত্ন করেন বইটি উৎকৃষ্ট জায়গায়। সবাইকে খুলে দেখান সময়মতো সুযোগমতো। যেনো এটি তারই । তিন এই বইটি উপহার দিতেন প্রিয়জনদের, জানিয়ে দিতেন এই বই তাকে নিবেদিত। আজ আর উৎসর্গের মধ্যে কোন আবেগ কাজ করেনা। নিজের সাথে সম্পর্কিত, নিজের পরিচিত, নিজের ব¬কের, নিজের অবলিগেশন পূরণের জন্য লেখক বই উৎসর্গ করেন খুব ছোট করে লিখে। খুব কৃপনতার সঙ্গে ব্যবহার করেন শব্দ। তারপর পাঠিয়ে দেন উৎসর্গীকৃত জনকে। কখনও ভুলেও যান পাঠাতে। উৎসর্গের তালিকায় আরেকজন যুক্ত হলো এই মনোভাবের প্রেক্ষাপটে উৎসর্গ হচ্ছে বই।

ফুলের যেমন মূল্য নেই বইয়েরও তাই। ফুল যেমন অমলিন এক ভালোবাসার আবদন নিয়ে পৌঁছে যায় গ্রহীতার কাছে, বইও তাই। কিন্তু এক বিশাল পার্থক্য আছে বই আর ফুলে-সেটি হচ্ছে বই স্থায়ী উপহার, ফুল অস্থায়ী। ফুল শুকিয়ে ফেলনা হচ্ছে, বই কিন্তু ফেলনা হবেনা কখনও, হবেনা শুকনো। বই লেখকের আবেগ, অনুভুতি, ভাবনা, পরিকল্পনা, চেতনা, বয়ে বেড়াবে আজীবন। ধরে রাখবে লেখকের বলা কথা পাঠকের জন্য যুগ যুগ ধরে। পাঠকের ঘরে বেঁচে থাকবে লেখক বই হয়ে। হাজার বছর পরেও বই নীরবে পাঠকের অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাব দেবে। সুতরাং বই ফুলের চেয়ে অনেক বড়ো উপহার। বর্তমান অস্থিরতার সময় আমরা দেখছি দেশের সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ কারাররণ করছেন। ধীরে সুস্থে’ মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে তারা রওনা হচ্ছেন কারাগারের উদ্দেশে। যাবার আগে তারা সঙ্গে নিচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ, কুরআনের অনুবাদ গ্রন্থ’ আর বেশকিছু অন্যান্য বই। এই একাকী নিঃসঙ্গ কারাজীবনে একমাত্র নির্ভযোগ্য সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন সংগ্রামী জীবন সমৃদ্ধ প্রখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়ে লেখা বই। এই সুযোগে তাদের অনুসারীরা, ভক্তরা, দলীয় কর্মীরা তাদের উপহার দিচ্ছেন বই। আইনজীবির মাধ্যমে কারাগারে উপহার পাঠাচ্ছেন বই। এই ক্ষেত্রে কি প্রমানীত হচ্ছেনা বই, একমাত্র বই নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী। অপরপক্ষে কারাগারে বন্দী মানুষটিও হয়ে ওঠেন লেখক। কারন নিসঃঙ্গ জীবন তার ভাবনা পরিকল্পনা অভিজ্ঞতাকে উদগীরণের অনুপ্রেরণা জোগায়।

ক্ষই না পড়লে শিশুর মন ও মননের বিকাশ হতে পারেনা। বই চিন্তার গভীরতাকে তীক্ষèতা দেয়।ভাবনার জগৎকে সম্প্রসারিত করে। বোধশক্তিকে পরিপক্কতা দেয়। দৃষ্টিভঙ্গীকে করে প্রসারিত। তথ্য জ্ঞানে চেতনায় মানসপট হয়ে ওঠে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন। বড়ো হয়ে ওঠার সাথে সাথে তৈরী হয় একটি পরিপূর্ণ কান্ডজ্ঞান। এই বই থেকে পিছিয়ে পড়া শিশুর জীবনে এইসব গুনাবলীর অভাব পরিলক্ষিত হলে তাকে সামাজিক জীবনে অবদান রাখার মতো ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে তোলেনা। আর এভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন হয়ে উঠবে আত্মকেন্দ্রিক ও আত্মঅহমিকায় নিমজ্জিত একটি ভঙ্গুর দুর্বিষহ জীবন। এতে আবির্ভুত হবে সঠিক নেতৃত্বহীন একটি অস্থির অসহিষ্ণ ুঅস্থিতিশীল অপরিকল্পিত জাতিসত্বা। তাই বই চর্চাকে বাদ দিয়ে হবেনা সঠিক চিন্তা ও বুদ্ধিসম্পন্ন একটি মুক্তমনের জাতি। আর তাই নানাভাবে বই উপহারকে উৎসাহিত করতে হবে। উপহারের প্রধান স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে বইকে। বুঝতে হবে মর্যাদার দিক থেকে, মুল্যের দিক থেকে, স্থায়ীত্বের দিক থেকে, সৌন্দর্যের দিক থেকে বই এর বিকল্প কোন উপহার নেই। বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উপহার। বইয়ের বিকল্প শুধু বই।

বই খুলে দেয় মনের চোখ। নিয়মিত পাঠাভ্যাস একজন মানুষের মানসিক বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বই জীবনের অন্যতম সঙ্গী। জীবনের জন্য গুরত্বপূর্ণ যে বই, তা থেকে আগামী প্রজন্মকে সরিয়ে রাখলে নিশ্চিত ধ্বংস নেমে আসবে আমাদের সামনের শিল্প সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও জ্ঞান শক্তির ভান্ডারে। তাই ঈদে ছোটদের বই দিন। বই উপহার দিন জন্ম দিনে। টিভিতে কার্টুন সিরিজের পাশাপাশি বই দিন ওদের। বই পড়ুক এবং বই নিয়ে আলোচনা করুক সে বড়োদের সঙ্গে। সেজন্য আপনাকেও বই পড়তে হবে। বাবা-মার চোখে ফাঁকি দিয়ে একসময় ছেলেমেয়েরা বই পড়তো গোপনে। সেই ছেলেমেয়েরাই এখন বাবা মা চাইলেও বই পড়েনা কেনো। এই পরিবর্তনের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে যে শিশু গোপনে একটি বই কিনেছে সে শিশুই এখন টাকা বাঁচায় ঠিকই কিন্তু বই কেনেনা। বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগী ব্যস্ত শিশুদের বইমুখী করার দায়িত্ব বাবা-মার। অবিভাবকের। পার্কে, ভিডিও গেমের দোকানে, আইসক্রিম পর্লারে, মিউজিকশপে যেভাবে বাবা মা শিশুকে নিয়ে গিয়ে বেছে নিতে স্বাধীনতা দেয়, সেরকম বইয়ের দোকানেও ওদের নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে ওদের চিন্তার জায়গাগুলো কখনও পরিষ্কার হবেন্ া। সৃজনশীলতার অবাব হবে ওদের মধ্যে। ভবিষ্যতে হয়ে পড়বে ওরা বুদ্ধিহীন। বইয়ের কাছে নিতে হলে ওদের দেখাতে হবে পরিবারে, স্কুলে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে, দিবসে-উৎসবে কিভাবে বইয়ের ব্যবহার হচ্ছে। আর সেজন্যই উপহার হিসেবে বইকে গ্রহণ করতে হবে মূলধারায়। বই পেলে যারা বিরক্ত হয় তাদের কাছ থেকে ছোটদের দূরে রাখতে হবে। কারণ ওরা বইকে সরিয়ে অন্যকিছুতে শিশুকে অন্য কিছুত আসক্ত করে তুলবে যা কখনই ওর জন্য ভালো হবেনা। সুতরাং বইয়ের প্রতি ভালোবাসার আবহ তৈরী ক[রুন। তাতে ঝাঁপ দিতে বলুন শিশুকে। সে হয়ে উঠবে মেধাবী এক অবিচল জ্ঞানী অভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান মানুষ। আমাদের দেশকে যারা দেবে আগামী দিনের নির্দেশনা ও নেতৃত্ব্।
লেখক : ফারুক হোসেন, ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক এবং সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার