অরিজিত শূর, চেয়ারম্যান, স্পটলাইট কলম্বাস : স্পটলাইট কলম্বাস ২০১৫ সালে স্থাপিত একটি নাট্যদল যাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল উচ্চ মানের থিয়েটার নাটক সৃষ্টি করা, সংগঠিত করা, প্রচার করা, অংশগ্রহণ করা এবং সেইসাথে থিয়েটার শিল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা। স্পটলাইট মধ্য ওহাইও এলাকায় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি অবস্থান তৈরি করেছে গত ৮ বছর ধরে। আমরা দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির প্রাণবন্ততাকে শিক্ষা ও প্রদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিল্পীদের মধ্যে সহযোগিতার উপর জোর দিই। এছাড়া ও আমরা বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের প্রবক্তা হিসেবে কাজ করি এবং অ-ইংরেজি নাট্যকার, নাট্যকর্মী এবং অভিনেতাদের সেন্ট্রাল ওহাইও এবং তার বাইরে তাদের দক্ষতা দেখাবার সুযোগ তৈরি করি। আমরা বিশ্বাস করি নাট্যশিল্প সম্প্রদায়কে সমৃদ্ধ করে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্যদের একটি অভিন্ন লক্ষ্যে নিযুক্ত করে। আমাদের মিশনের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল দক্ষিণ এশীয় থিয়েটার শিল্পে সাংস্কৃতিক বিষয় এবং অনুশীলন গুলিকে প্রাসঙ্গিক করণ এবং অন্তর্দৃষ্টি দিতে সাহায্য করার জন্য থিয়েটার শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং দর্শকদের মধ্যে মানসম্পন্ন আলোচনার সুবিধা দেওয়া।
গত সাত বছরে, আমাদের সংস্থা স্পটলাইট কলম্বাস সফলভাবে সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে এবং আমাদের সমাজের গঠনে নাট্যশিল্প যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা তুলে ধরার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে নাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে। সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল বৃহত্তর কলম্বাসের সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপের একটি প্রাণবন্ত সংযোজন হয়ে উঠেছে। নাটক আয়োজিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় (ইংরেজি সুপারটাইটেল সহ) এবং ইংরেজি ভাষাতেও। আমরা স্থানীয় নাট্য ব্যক্তিত্বদের এই নাটক গুলিতে শেখানো এবং অভিনয় করার জন্য জড়িত করেছি এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাটক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নির্দেশনা, উপদেশ ও পরামর্শ পেয়েছি। নাটকের পাশাপাশি, আমরা প্রতি বছর থিমের উপর ভিত্তি করে একটি প্যানেল আলোচনারও আয়োজন করেছি এবং তাতে অংশগ্রহণের জন্য বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা গত সাত বছরে সহযোগিতা পেয়েছি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে যেমন ওহাইও আর্ট কাউন্সিল, গ্রেটার কলম্বাস আর্ট কাউন্সিল, কনটেম্পোরারি আমেরিকান থিয়েটার কোম্পানি, কলম্বাস, এপিক এক্টরস ওয়ার্কশপ, নিউজার্সি, থিয়েটার রাউন্ডটেবিল, কলম্বাস প্রভৃতি।
২০২০ ও ২০২১ এ আমরা অতিমারীর জন্য অনলাইন সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিলাম এবং ২ দিন ধরে দেশ ও বিদেশের ২৫ থেকে ৩০ টি নাটক আর সেইসাথে অনলাইন প্যানেল আলোচনার ব্যবস্থা করি। ২০২১ এর নভেম্বরে অতিমারীর দাপট একটু কমলে আমরা কলম্বাসের স্থানীয় বাংলা দলগুলির মধ্যে মৈত্রীস্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি বাংলা নাটকের উৎসব “এক মুঠো নাটক” আয়োজন করি এবং দর্শকরা বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়ে আমাদের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায় ও উৎসবকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলে।
এলো ২০২২। সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যালের অষ্টম বছর। দীর্ঘ দু বছর পর সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল প্রত্যাবর্তন করবে অনলাইন থেকে মঞ্চে। এইবার আমরা স্থানীয় বাংলা দলগুলিকে ও অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলাম আর সেই সাথে স্থানীয় ইংরেজি পেশাদার নাটক ও বাইরের রাজ্যের নাটক তো থাকবেই। আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এল ডাবলিন সিটি কাউন্সিল ও আবে থিয়েটার অফ ডাবলিন। তৈরী হলো সূচি, ব্যবস্থা হলো উৎসব আয়োজনের, শুরু হলো বিভিন্ন নাটকের মহড়া এবং অবশেষে এগিয়ে এলো ১০ ও ১১ ই সেপ্টেম্বর শনি ও রবিবার। অকৃত্রিম ও বিশুদ্ধ নাটকের উষ্ণতায় ভরা দুটি দিন। দুরু দুরু বুকে অপেক্ষার অবসান আয়োজক ও কলাকুশলীদের। তারপর ইতিহাস। নাটকের গুণমান ও দর্শক সংখ্যার বিচারে এটি এখন পর্যন্ত সবচাইতে সফল সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল হিসেবে মান্যতা পেলো। দুদিন ধরে আটটি উন্নতমানের নাটক ও একটি প্যানেল আলোচনা দর্শকমন কে জয় করে নিলো। প্রথমদিন উৎসব শুরু হলো স্পটলাইটের নিজেদের প্রযোজনায়, সন্দীপ মজুমদারের লেখা ও তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় “মা” নাটকটি দিয়ে। এটি ভারতের প্রাক স্বাধীনতা যুগের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ এবং মানবিকতার দলিল। এরপরে ছিল শিকাগোর মান্ডি থিয়েটারের হিন্দি নাটক “পাঞ্চলাইট”, নাট্যকার ফনিস্বরনাথ রেনু আর পরিচালনা বর্ষা বিশাল। নাটকটি উত্তর ভারতীয় গ্রাম্য সামাজিক স্তর ভিত্তিক একটি রোমান্টিক ও ব্যাঙ্গাত্মক হাস্যরস। এরপরে ছিল প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন নাটকের পরিচালক রা এতে অংশগ্রহণ করেন। নিয়ামক ছিলেন ডাবলিন সিটির থিয়েটার সুপারভাইজার জো বিশারা। আলোচ্য বিষয় ছিল থিয়েটারে ক্যানসেল কালচার, দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আলোচনা জমে যায়। প্রথমদিনের শেষ নাটকটি ছিল একটি মিউজিক্যাল “দ্য মোমেন্ট”, আবে থিয়েটারের প্রযোজনায় আর জো বিশারার পরিচালনায় এই নাটকটি ছিল চরিত্রদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত অন্বেষণ। দ্বিতীয় দিন উৎসব শুরু হয় কলম্বাসের অন্য থিয়েটারের প্রযোজনায় সন্দীপ মজুমদারের লেখা আর পরিচালনায় নাটক “পার্ক বেঞ্চ” দিয়ে। দুটি কলেজ তরুণ আর তরুণীর ভালোবাসার অন্বেষণের মাধ্যমে সমকামীতা আর মানবিকতার এক সুন্দর গল্প বলে এই নাটকটি। দ্বিতীয় নাটকটি কলম্বাসে কে এস প্রোডাকশনের “নক্সীকাঁথা”। কৌশিক মজুমদারের লেখা আর অরিজিৎ শূরের পরিচালনায় এটি একটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের গল্প যেখানে প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্নিহিত বিড়ম্বনা ও মানুষের মানবিক উত্তরণের কাহিনী সুচারুভাবে পরিবেশিত হয়। তৃতীয় নাটকটি ছিল ওয়াশিংটন ডি সির নাট্যদল এবং থিয়াট্রিক্সের প্রযোজনায় ও অরিন্দম ঘোষ এর রচনা ও পরিচালনায় ইংরেজি নাটক “ফাইভ গ্রেইন্স অফ রাইস”। এই নাটকটিতে একটু মজার ছলে ও রহস্যের ছোঁয়ায় একটি মধ্যবয়স্ক দাম্পত্য সম্পর্কের দ্বন্দ প্রস্ফুটিত হয়। শেষ নাটকটি ছিল আবে থিয়েটারের প্রযোজনায় মিউজিক্যাল “দ্য মোমেন্ট” এর দ্বিতীয় প্রদর্শন। দর্শক সমীক্ষায় ও উপস্থিত সমালোচকদের মতামতে সব কটি নাটক ই সসম্মানে উর্তীন্ন হয়েছে। এবং জিতে গিয়েছে নাট্যশিল্প। ভবিষ্যতে আরও ভালো নাটক দেখানোর অঙ্গীকার নিয়ে স্পটলাইট এর এই নিরলস প্রচেষ্টায় আমন্ত্রণ রইলো সমস্ত নাট্যমোদীদের।
আপনার মতামত লিখুন :