সেই চিঠি – স্বরাজ চক্রবর্তী


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২০, ২০২৩, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ /
সেই চিঠি – স্বরাজ চক্রবর্তী

ছোটবেলায় বড়োদের মুখে শুনেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ধনী ও বিলাসী কবি ছিলেন। সাধারণ মানুষের মতো স্কুল কলেজ
পাস করে , চাকরি করে জীবন চালাতে হয়নি। বয়সে বড় হলেই যে মানুষ শিক্ষিত ও পরিণত হয় না, সেটা পরে
বুঝেছিলাম। বই পরে এবং সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম কি অপরিসীম কর্মবীর
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন। কাউকে না জানতে দিয়ে কি অনাড়ম্বর ও আর্থিক অসচ্ছলতার সঙ্গে সমগ্র জীবন যাপন
করেছিলেন। জীবনের সর্বস্ব দিয়ে (নোবেল প্রাইজের টাকা এবং স্ত্রীর গয়না) শান্তিনিকেতন কে গড়ে তুলতে
চেয়েছিলেন। জীবনে সতেরো থেকে আঠারো বার বিদেশ গেছেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাতে নিজের আশ্রম টাকে
সুন্দর করে প্রতিষ্টা করে যেতে পারেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে। অথচ অর্থ,জাগতিক সুখ ও খ্যাতির প্রতি
এতটুকু লোভ ও বাসনা ছিল না।
আজ একটা অমূল্য চিঠি তুলে ধরছি যেটা এই মহামানব কে বুঝতে সাহায্য করবে। যখন এই চিঠিটি উনি লিখছেন,
তখন পারিবারিক কারণে মানসিক ভাবে খুবই অস্থির ছিলেন। নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথের পড়াশুনার খরচ ও
জামাইদের আর্থিক আবদার মেটাতে গিয়ে উনি ঋণগ্রস্থ হন।
সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথের ভাইপো দীপেন্দ্রনাথের স্ত্রী হেমলতা ঠাকুর (বড়বৌমা) একটা চিঠি লেখেন তাঁর
শ্রদ্ধেয় কাকামশায়্ কে।.হেমলতা ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। হেমলতা ঠাকুর প্রায়
একশো বছর বেঁচে ছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ কে খুব নিকট থেকে সবচাইতে বেশিদিন দেখেছেন। চিঠিতে হেমলতা
রবীন্দ্রনাথ কে অনুরোধ করেছিলেন রথীন কে বেশি টাকা দেবার জন্যে। কারণ রথীনের টাকার প্রয়োজন আছে।
রবীন্দ্রনাথ এই চিঠির উত্তরে কী লিখেছিলেন সেটা তুলে ধরছি।

কল্যাণীয়েষু বউমা,
তুমি যে মনে করছো টাকা কড়িতে বিশেষভাবে রথীদের প্রয়োজন আছে, সেটা নিতান্ত একটা অন্ধ সংস্কার মাত্র।
কথাটা যদি সত্য হতো তাহলে কেবলমাত্র বড় মানুষের ঘরেই মানুষ মানুষ হতো, গরিবের ঘরে হতো না। তুমি যে
ভাবছো সংসারে আমি টাকার ভোগ সেরে ঠান্ডা হয়ে বসেছি, সে কথা ঠিক নয়। কোনোদিনই আমি টাকা ভোগ করিনি,
ঈশ্বরের প্রসাদে আমার জীবনের অধিকাংশ কালই আমার হাতে টাকা ছিল না। যেটুকু ছিল নিজে ভোগ করিনি।
দরিদ্রের মতো টানাটানি করেই ৎ#৩৯; আমার দিন গিয়েছে – এমন কি বই কেনা আমার সব চেয়ে সখ ছিল, কিন্তু
কখনোই সাধ পূর্ণ করে বই কেনবার সামর্থ আমার হয়নি।
আমি আজ যদি টাকার উপর মমতা করি তাহলে রথীকে আমি যে টাকা দেব, সেই সঙ্গে সেই টাকার মমতাও দেব।
পুত্রের মধ্যে পিতা পূর্ণতর হবে এই হচ্ছে সৌভাগ্যের কথা। রথী যদি বিষয়ী হয়, তবে রথীর ভাগ্য মন্দ এবং
আমার চেয়েও মন্দ।
রবীন্দ্রনাথের এই চিঠি পেয়ে হেমলতা দেবী নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি কাকামশায়্ এর মর্মবেদনা
উপলব্ধি করে অনুশোচনায় ডুবে যান। কিছুদিন পরে দেখা হলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্ৰাৰ্থনা করেন প্রবীণ
কাকামশায়ের কাছে। চিরক্ষমাশীল রবীন্দ্রনাথ সস্নেহে তাঁকে ক্ষমা করেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : বিপুল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সাধু সান্নিধ্যে রবীন্দ্রনাথ