ভুলতে পারিনি – স্বরাজ চক্রবর্তী


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ /
ভুলতে পারিনি – স্বরাজ চক্রবর্তী

কলম্বাস, ওহাইও, আমেরিকা

সালটা বোধহয় ২০০০ এর আগে হবে। আমেরিকা থেকে লুফথানসা এয়ারলাইন এ দেশে ফিরছি। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে একটি জার্মান পরিবার উঠলো। জার্মান স্বামী ও স্ত্রী এবং সঙ্গে দুটি ছেলে ও মেয়ে। ছেলেটির সিট্ আমার পাশেই, জানলার দিকে। ভদ্রলোক আমার সামনের সিটে। পাশের রো তে মা ও মেয়ে। গায়ের রং ও মুখের চেহারা দেখে বোঝাই যায় ছেলে ও মেয়ে নেটিভ born জার্মান নয়। খুব সম্ভবতadopted- যতদুর মনে হচ্ছিল ইন্ডিয়ান subcontinent বংশোদ্ভুত। ওদের ভাষা ও হাবভাব পুরোপুরি জার্মান। ছেলেটির বয়স চোদ্দ পনেরো হবে – মেয়েটির ছয় সাত। মেয়েটি দেখলাম মায়ের খুব কোলঘেষা। বিদেশে এই বয়েসও সাধারনত এরকম দেখা যায় না। জার্মান মহিলাকেও দেখলাম স্নেহভরা আদর মেয়ের প্রতি।

ছেলেটি বেশ মিশুকে ও শান্ত প্রকৃতির। ওর নাম Hertman না কি বললো আজ আর মনে নেই। বললো English ওর second language এবং এশিয়া টুরে আসার আগে নানা information নিয়ে এসেছে। এই প্রথম জার্মানির বাইরে vacation এ আসছে – ওদের টুর প্লান এ ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপান আছে। খুব excited ইন্ডিয়া দেখবার জন্যে। ওর বাবা ইংরেজি খুব কম বোঝেন ও বলেন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় বললেন ওর ছেলে খুবই smart এবং উনি ওর অনেক প্রশ্নর উত্তর দিয়ে উঠতে পারেন না। দিল্লি তে নামার আগে পর্যন্ত আমায় বিরক্ত করে যাবে – আমি যেন প্রস্তুত থাকি।

আমার কিতু ওর সাথে কথা বলতে বেশ ভালো লাগছিলো এবং কেন জানিনা মনে হচ্ছিল ও যেন আমার বহুদিনের চেনা। ছেলেটিও কিছুক্ষণ পরে বলেই ফেলল যে আমার company ও খুব enjoy করছে। সামনের বছর বার্লিনে একটা institute এ extra credit নেবার জন্যে স্কলারশিপ পেয়েছে।

দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কাটিয়ে ওর সাথে গল্প করতে করতে ব্রেকফাস্ট টাইম এসে গেল দিল্লিতে ল্যান্ড করার আগে। অনেক কলকাতা যাত্রী প্লেনে থাকে বলে typical কলকাতা স্টাইল জল খাবার সার্ভ করত ওই লাস্ট লাপ অফ ফ্লাইট এ – যতদুর মনে পরে।

ব্রেকফাস্ট এ sausage সার্ভ করে কিনা জিগ্যেস করায় আমি বললাম খুব সম্ভভত নয়। বলতে বলতেই খাবারের গন্ধ নাকে এলো। দেখলাম vegetable কাটলেট এর দিকে চেয়ে ছেলেটি হঠাথ যেন খুব চঞ্চল হয়ে উঠলো। নিশ্চই খুব খিদে পেয়েছে ভাবলাম। কিন্তূ খাবার পেয়েই যে খেতে শুরূ করলো তা কিন্তু নয়। মনে হলো এ চঞ্চলতা শুধু খিদের জন্যে নয় – ও যেন কি একটা হারানো জিনিস খুঁজছে। কিছু লাগবে কিনা আমি জিগ্যেস করায় বললো “আমি এতদিন কেন এই খাবার খাইনি – এত ভালো লাগছে ! জার্মানির interior এ আমরা থাকি – কোনদিন ইন্ডিয়ান খাবার খাইনি কিনতু আমার যেন মনে হচ্ছে এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।”

আমি ইন্ডিয়ান ফুড spicy বলে ওর excitement কমাবার চেষ্টা করলাম। কিনতু ওর ভালো লাগার ঘোরটা কাটাতে পারলাম না।

এর মধ্যেই সিকিউরিটি embarkation ফর্ম এসে গেছে যারা দিল্লিতে নামবে। ওকে ফর্ম fill up করতে হবে। আমার একটু help চাইলো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে দেখি একটা খুব পুরানো পাসপোর্ট বার করে আমায় দেখালো। ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট। পাতা উল্টাতেই চমকে উঠলাম! তুষার – পরিষ্কার বাংলা অক্ষরে ওর নাম লেখা। ও তো বাংলা জানেনা।

পনেরো বছর আগে এই নামে Mother Teresa Missionaries of Charity থেকে adopted – ও নিজেও জানে না কোন এক হতভাগ্য বাঙালী রমণী ওর জন্মদাত্রী। আমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে জিগ্যেস করলাম কলকাতা আসার প্লান আছে কিনা ইন্ডিয়া টুরে। বললো বাবার কাছে Itineary আছে – ও ঠিক জানে না। আমার নাম ঠিখানা দিয়ে দিলাম যদি আসে। খুব আগ্রহ ভরে নিল। দিল্লিতে Aufedersein বলে নেমে গেল।

কলকাতায় এসে ছিল কিনা জানিনা। আর কোন contact হয়নি। আমি তুষারকে ভুলতে পারিনি।