মিজান রহমান, নিউইয়র্ক : মাসিক ওহাইও সংবাদের সম্পাদক বন্ধুবর জনাব লিটন কবিরের অনুরোধে এই লেখাটির জন্য অনুপ্রাণিত হই। আশা করি লেখাটি পাঠকদের ভালো লাগবে এবং তা যদি এদেশে বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট পরিবার ও তাদের ঘরে জন্ম নেয়া আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেমেয়েদের কোনভাবে উৎসাহিত করার জন্য সহায়তা করতে পারে সেখানেই এই লেখাটির সার্থকতা।
দুনিয়ার সব বাবা-মায়েদের কাছেই তাদের সন্তানেরা (ছেলেমেয়েরা) অতি-প্রিয়। সন্তানরা মেধাবী হলে অথবা তাদের অন্য কোন সাফল্যে সব বাবা মা’রাই গর্ববোধ করেন। সন্তানরা যখন সুখী হয় বা সুখে থাকে তা জেনে যারপরনাই সুখানুভুতি হয়। আমিও একজন বাবা হিসেবে তার ব্যতিক্রম নই।
রুমানা আমার মেয়ে। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটিতে অনেকেই আমার পরিবার বা রুমানা’কে চেনেন। তারা প্রায় সকলেই রুমানা’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রুমানা তার সুন্দর চেহারা, নম্র স্বভাব, বন্ধু-প্রবণতা ও সেবাকাজে এগিয়ে আসার জন্য সকলেরই নজর কুড়িয়েছে। রুমানা আমার একমাত্র কন্যা, তার ছোট এক ভাই ও বড় এক ভাই আছে। অর্থাৎ আমাদের তিন-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার। তাদের তিনজনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই নিউইয়র্কেই। ছোটবেলা থেকেই বাবা হিসেবে আমি এবং তাদের মা আমাদের ছেলেমেয়েদের কোন রকমের জবরদস্তি না করে, উদার মন নিয়ে আমেরিকার মেইনস্ট্রিম-এর লেখাপড়া ছাড়াও অন্যান্য খেলাধুলা সহ আমাদের নিজস্ব ধর্মচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে পরিচিত করে তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনোই তাদের বলা হয়নি যে তাদেরকে নির্দিষ্ট কোনকিছু করতে হবে, বা নির্দিষ্ট কোন পোশাক পরতে হবে, অথবা নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতেই হবে।
ইমিগ্র্যান্ট পরিবার হিসেবে নিউইয়র্কের মত ঘনবসতিপূর্ন একটি বড় শহরে বসতি গড়ার অনেক রকমের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে দুনিয়ার প্রায় সব দেশেরই মানুষের একটি সহাবস্থান বা মিলনমেলা। নিউইয়র্ককে বলা হয় একটি মেল্টিংপট। যেখানে সব ধর্ম, বর্ন, ভাষা, ও সংস্কৃতির লোকজনের সহবাস। সেই সুবাদে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে কিছুটা করে হলেও বাংলা ভাষা শেখার, বাংলায় গান গাওয়ার বা নাচ শেখার বা মঞ্চ নাটকে অভিনয় করার বা পরিচত হওয়ার সুযোগ করে দেয়াটা সম্ভব হয়েছে। যদিও তারা আধুনিক জীবনযাত্রা ও কর্মকাণ্ডের সাথে একাধারে পরিচিত। যেমন ছেলেমেয়েদের কিছুটা করে হলেও ভিডিও গেম্স্ খেলা বা নিয়মিত শরীরচর্চার প্রবণতা; সাঁতার কাটা, বাইসাইকেল চালানো, লেক্রোস, বাস্কেট বল বা সকার খেলা ইত্যাদিতে আগ্রহী হয়েছে। সেই সাথে নিজেরাই ঠিক করে নেয় কি পরিমানে তারা নিয়মিত ধর্মচর্চা করবে বা নিজ সংস্কৃতির বিভিন্ন ব্যাপারে চর্চা করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে। তারা পাঁচ-সাত বছর বয়স থেকেই মোটামুটি নিয়মিত পাঁচ-ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও নিয়মিত কোরান পাঠ করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা, এসবই তাদের জীবন-যাত্রার সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে বেছে নিয়েছে। তবে আমার দৃষ্টিতে ছেলেদের তুলনায় আমার মেয়েটা (রুমানা) এসবই অনেক গুরুত্ত সহকারে নিয়েছে।
রুমানা যদিও লং আইল্যান্ডের একটি পাবলিক স্কুলে পড়াশুনা করেছে, তবে তার মেধার কারণে অথবা একাগ্রচিত্তে পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার কারণে, সে ১০-টারও অধিক সংখ্যক বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড-সহ তার হাইস্কুল থেকে স্কলার-ডিপ্লোমা অর্জন করে। ন্যাশনাল ওনার রোল সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড সহ সে প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড ফর একাডেমিক একসিলেন্স, পিয়ার লিডার’স রিকোগনিশন অ্যাওয়ার্ড; সারাহ সিফারেলি ওয়ালেন ইংলিশ অ্যাওয়ার্ড; সার্টিফিকেট অফ অ্যাচিভমেন্ট ইন রিসার্চ; লেওন জে. ক্যাম্পু স্কলারশিপ; কালারগার্ড রিকোগনিশন অ্যাওয়ার্ড; ফাউন্ডিং মেম্বার হ্যান্ডবেল স্কলারশিপ; এবং সাইন্স রিসার্চ প্রোগ্রাম স্কলারশিপ, ইত্যাদি সহ গ্রাজুয়েশন করেছিলো।
রুমানা বেশ কয়েকটি নামকরা কলেজ/উনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু বাড়ীর কাছে, বিশেষত তার মা’র কাছে থাকার নিমিত্তে সে নিউইয়র্ক স্টেট কলেজ, এই লং আইল্যান্ডের’ই সুবিখ্যাত স্টোনিব্ৰুক ইউনিভার্সিটি’তে ভর্তি হয়। সে কৃতিত্বের সাথে যথাসময়েই কলেজ সমাপ্ত করে। কলেজে থাকাকালীন সে শেষের দুই বছর রিসার্চ এসিট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সাথে সাথে রেসিডেন্সিয়াল এসিস্ট্যান্ট (আর.এ.) হিসেবেও কাজ করে সুনাম অর্জন করে।
রুমানা তার বাবা’র সঙ্গে (আমার সঙ্গে) ছোট বেলা থেকেই বাংলাদেশী আমেরিকান ডাক্তারদের বিভিন্ন সম্মেলন ও অনুষ্ঠানাদিতে যায় এবং অনুপ্ৰাণিত হয় যে সে ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হবে, এমনকি একজন নিউরোলজিস্ট বা নিউরো-সার্জন হবে – এইরকমের উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে রুমানা তার কলেজ পাঠসূচি হিসেবে মেজর-সাবজেক্টগুলো নির্বাচন করে পড়াশুনা করে। তার সেই উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখেই সে কলেজে থাকা কালীন লং আইল্যান্ডের একটি নামকরা হাসপাতাল, নর্থ-ওয়েল হেলথ-এ দুই সামারে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে সে বাংলাদেশী আমেরিকান একজন নামকরা ডাক্তারের মেডিকেল প্র্যাক্টিসে নিয়মিত পার্ট-টাইম জব হিসেবে ‘শ্যাডোওইং’ করার মাধ্যমে একজন মেডিক্যাল অ্যাডমিন হিসেবে কাজের ট্রেনিং নেয়। কলেজ শেষ করার পর রুমানা বছর-দুয়েকের জন্য গ্যাপ নিয়ে মেডিকেল স্কুলে ভর্তি-পরীক্ষা ইউ.এস.এম.এল.ই.-এর জন্য প্রস্তুতি নেয়। একই সাথে কোবিড-১৯ পেন্ডামিক-এর সময় থেকে শুরু করে সে নিউইয়র্কের একজন নামকরা প্লাষ্টিক সার্জনের বড় একটি প্র্যাক্টিসে একজন মেডিকেল অ্যাডমিন-এসিট্যানন্ট হিসেবে বছর দেড়েক ফুল-টাইম কাজ করে – এর তিনটি ডিফারেন্ট লোকেশনে, লং আইল্যান্ড, ব্রুকলিন এবং ম্যানহাটনে সে নিয়মিত কাজ করার জন্য যাতায়াত করে।
মিষ্টি মেয়ে এবং অতি-পরিশ্রমি রুমানা ছোটবেলা থেকেই তার বড় ভাইয়ের সাথে একসঙ্গে লং আইলান্ডে বাংলাদেশীদের দ্বারা নির্মিত ও প্রতিষ্ঠিত লিমস মুসলিম সেন্টারে গিয়ে এরাবিক ক্লাসে কোরান ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে। একই সময়ে তারা নিউইয়র্কে কুইন্স-এ উদীচী’র উইকেন্ড স্কুলে গিয়ে বাংলায় পড়তে, লিখতে ও গান গাইতে শিখে। যদিও তার ভাই এবিষয়ে তেমন মনযোগী ছিলোনা, সে (আমার বড় ছেলে) মঞ্চ অভিনয়ে বা কৌতুক পরিবেশন করে দর্শকদের কিছুটা আনন্দ দিয়েছিলো, কিন্তু রুমানা নিয়মিত হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাংলা গানের চর্চা কেরেছিল। রুমানা উপস্থিত বক্তৃতায় তার মিডল স্কুলে ইংরেজি ভাষায় যেমন, তেমনি করে উদীচি’র বাংলা স্কুলেও বাংলা ভাষায় সে সমান পারদর্শী ছিল। তবে হাইস্কুল যাওয়া থেকে শুরু করে কলেজ অব্দি সে বাংলা চর্চা বা বাংলায় গান গাওয়া তেমন আর চালিয়ে যেতে পারেনি। আমার মতে, তার দুটি কারণ ছিল, একটি হলো সময় ম্যানেজ না করতে পারার জন্য, এবং দ্বিতীয়টি হলো রুমানা অনেকটা ধর্মীয় অনুশীলনে আরো বেশী মনোনিবেশ করে সে সময় থেকে। সে তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় এটা বুঝতে পেরেছে এবং গ্রহণ করেছে যে এই আমেরিকাতেও সে একটি মুসলিম মেয়ে বা নারী এবং তাকে অনেক কিছুই বাছবিচার করে চলতে হবে।
রুমানা যদিও তার ছোট বেলা থেকেই পরিছন্ন ও মার্জিত পোশাক পরিধান করায় অভস্ত ছিল, এমনকি নিয়মিত সেলোয়ার-কামিজ এবং মাঝে মাঝে কোন কোন অনুষ্ঠানাদিতে সখ করে শাড়ি পড়তো । কিন্তু অতি সম্প্রতি, গত রোজার মাসের পর রুমানা সিন্ধান্ত নিলো যে সে সার্বক্ষণিকভাবে বা নিয়মিত হিজাব পরবে। রোজার ঈদের পর পরই সে তার বাবাকে (আমাকে) বললো, “বাবা আমি সিন্ধান্ত নিয়েছি যে আমি এখন থেকে হিজাব পরবো।” আমি বললাম, “যা কিছু তোমাকে সুখী করবে, তুমি তা করতে পারো। তুমি সুখী থাকলে আমিও সুখী হবো। তবে এটা একটা বিরাট দায়িত্বশীল ও গুরুত্তপূর্ন একটি কাজ। একবার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে বা তোমার পক্ষে সেবিষয়ে খাপ খাইয়ে চলাটা অধিকতর কঠিন হতে পারে।” তার জবাবে রুমানা তার বাবাকে (আমাকে) বললো, “বাবা, আমি বিগত কয়েক বছর ধরেই এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে আসছি, এবং প্রতি রমজান মাসেই এবিষয়টা আমাকে দ্বিধান্বিত করে আসছিলো। অবশেষে এই রমজানে আমি দৃঢ় প্রত্যেয়ের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি এখন থেকে হিজাব পরবো। বিশেষত মেডিক্যাল স্কুল শুরুর আগেই আমি এবিষয়ে নিশ্চিত হতে চাই।” মেয়ের মধ্যে সেই দৃঢ় প্রত্যয় দেখে এবং তার চারিত্রিক বলিষ্ঠতার কথা জেনে তার বাবা (আমি) তাকে সম্মতি দিলেন এবং তাকে উৎসাহিত করলেন।
রুমানা’র শখ বা হবি’র মধ্যে সে নিয়মিত জিম-এ গিয়ে শরীরচর্চা করা; বই পড়া; তার বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, যেমন শপিং করা, মুভি দেখা বা ডাইনিং-আউট ইত্যাদি সহ, মাঝে মাঝে পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি বা গেট-টুগেদারে যোগদান করা। সে ছোটবেলা থেকেই পরিবাবের সাথে এই আমেরিকার বিভিন্ন্য দর্শনীয় স্থানে এবং দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে পছন্দ করে। অতি সম্পত্তি সে তার দুই ভাই, এক বান্ধবী ও বান্ধবীর-ভাই এবং তাদের আরেক বাল্য-বান্ধবীকে নিয়ে গ্রীস-এ ঘুরে এসেছে। কিশোরী বয়সে সে তার বড় ভাইকে নিয়ে লন্ডন ও প্যারিস ঘুরে এসেছে। সে তার বাবার সাথে (আমার সাথে) বিভিন্ন্য কর্পোরেট স্পন্সরড ডেস্টিনেশনেও বেড়াতে যেতে পছন্দ করে। এবছরে বাপ-বেটি মিলে ক্যারিবিয়ান আইলেন্ডের এক দেশ থেকে ঘুরে এসেছে।
রুমানা যদিও ফ্যাশন সচেতন কিন্তু তা করতে গিয়ে সে যে একজন মুসলিম-নারী তা মনে রেখেই নিজের ফ্যাশন-শখ মেটাবে। অতি সম্প্রতি লং আইল্যান্ডে “বাংলাদেশী-আমেরিকান নাইট” উদযাপিত হয় এবং সেখানে প্রথমবারের মত ‘ফ্যাশন শো বাই নিউ জেনারেশন অফ বাংলাদেশী-আমেরিকানস’ বলে একটি পর্ব ছিলো। যা বাংলাদেশী-আমেরিকান এক স্বনামধন্য ফ্যাশন-কাপল, যারা গত বছরে প্রথমবারের মত নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক (এন.ওয়াই।এফ.ডব্লিউ)-তে বাংলাদেশী-ফ্যাশন শো উপস্থাপনা করে, তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। সেখানে যখন রুমানাকে আমন্ত্রণ করা হয় ফ্যাশন-রান-এ যোগদান করার জন্য তখন রুমানা সম্মত হয়, তবে তার শর্ত ছিল যে তাকে একজন মুসলিম-নারী হিসেবে সেই ফ্যাশন-শো-তে অংশ গ্রহণ করেত দিতে হবে। তারা সবাই মিলে প্রায় চার-মাস যাবৎ সেই ফ্যাশন-শো’র জন্য প্রাকটিস-রান করে। অবশেষে বাংলাদেশ-নাইট ২০২৩ সালের সেই অনুষ্ঠানটি গত ১১ই আগস্টে লং আইলেন্ডের বিখ্যাত এআইজেনহাওয়ার পার্কের গ্রীষের এক রোদ্রৌজ্জ্বল বিকেলে ও সন্ধ্যায় লেকের পাড়ে হ্যারি চ্যাপিন লেক সাইড থিয়েটার-এর সেই উন্মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। তখন আমাদের নুতুন প্রজন্মের সকল অংশ গ্রহণকারীরাই উপস্থিত দর্শকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে এবং রুমানা’র পোষাক (শাড়ি) ও তা পরিধানের যে সংযোজটতা সে দেখিয়েছিলো তা নিয়ে প্রচুর আনন্দ-গুঞ্জন ও তারিফ শুরু হয়।
ঐ অনুষ্ঠানের পর সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় কিছু পত্রিকায় যখন সেই বাংলাদেশ-নাইট ও ফ্যাশন-শো’র খবর ছড়িয়ে পড়ে তখন রুমানা’র বাবা (আমি) নিউইয়র্কের বেশ কয়েকটি স্থানীয় বাংলা-টি.ভি. নিউজ-চ্যানেল ও মুসলিম-সংগঠন থেকে রুমানা’র ব্যাপারে জানার জন্য এবং তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য প্রস্তাব পায়। তবে রুমানা সেইসব মিডিয়া কভারেজ-এর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলোনা। বরঞ্চ সে তার পড়াশুনার বিষয়েই মনোযোগী থাকতে পছন্দ করে। মূল কথা হলো ফ্যাশন শো মানে যে নারীদের শরীর দেখানো নয় এই মেসেজটা রুমানা তার স্বল্প একটা প্রয়াসে অতি সার্থকভাবে তা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। যাকিনা অনেকেরই নজর কেড়েছে। রুমানা তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এই আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে নিউইয়র্কের নামকরা এন.ওয়াই।আই.টি. ইউনিভার্সিটি’র কলেজ অফ ওসথেওপ্যাথিক মেডিসিন-এ তার মেডিক্যাল স্কুলের পরাশুনা শুরু করে। গত ১৬ আগস্টে তাদের “হোয়াইট কোট সিরিমনি’র মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস অফ ২০২৭-এর দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়। এদেশে একজন চিকিৎসক বা ডাক্তারের পেশাগত জীবনে অনেক সন্মান, কর্মক্ষেত্রে পরিতৃপ্তি, ও আর্থিকভাবে সচ্ছলতার নিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও, এর যাত্রাপথ দীর্ঘতম এবং অনেকটা অনিশ্চিত। পর্যাপ্ত পরিমান টিউশন-ফি ও অন্যান্য খরচাদির দায় থাকা সত্ত্বেও, অনেক কঠিন পরিশ্রমী হওয়া, একাগ্রতা, শৃঙ্খলা মেনে চলা, এবং মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন আছে। চার-পাঁচ বছরের মেডিক্যাল স্কুল শেষ করার পর তাদেরকে আরো তিন-চার বছরের জন্য ট্রেনিং (রেসিডেন্সি) করতে হয়। তারপর আরো দুই থেকে চার বছরের জন্য কাঙ্খিত কোন স্পেশাল্টিতে ফেলোশিপ করতে হয়। সুতরাং এদেশে মেডিক্যাল কলেজের যাত্রাপথের “টানেল”-টা অনেক লম্বা এবং দুর্বিষহ হতে পারে, তবে টানেলের শেষে রয়েছে কাঙ্খিত পুরস্কার ও আলোর বন্যা।
পাঠকদের কাছে আন্তরিকভাবে আমার মেয়ে রুমানার জন্য দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি এবং সেইসাথে এদেশে আমাদের নতুন প্রজন্মের সকল ছেলেমেয়েদের জন্য উত্তর উত্তর আরো বেশী করে তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য কামনা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :