ওহাইও সংবাদ : নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতিসংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। তবে বিষয়টি জানা যায় গতকাল শুক্রবার। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে পদ হারানোর পর নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস প্রাঙ্গণে গিয়ে ওঠেন। তবে সেখানে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এমরানের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থানের খবর প্রকাশের পর গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে যান। সেখানে থাকা সাংবাদিকরা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে দূতাবাসের বাইরে থেকে একটি গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে পরিবারসহ দূতাবাস ছেড়ে যান এমরান। পরে তিনি একটি গণমাধ্যমকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে পুলিশ রয়েছে।
এমরান আহম্মদ আরও বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাই মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
এমরানকে অব্যাহতি দিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে তার নিয়োগ বাতিলের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাক্ষরিত ৭ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া’র নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে এমন কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় তিনি আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি সড়কপথে নিজ নির্বাচনী এলাকা কসবার উদ্দেশে রওনা হন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে একটি বক্তব্য দিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় আছেন এমরান আহম্মদ। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এ বিবৃতি ও খোলা চিঠির সপক্ষে গত সোমবার গণমাধ্যমে কথা বলেন এমরান। পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে বক্তব্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি ও উদ্বেগ সঠিক।’ এমরান দাবি করেন, পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার এসব বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। তবে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে একাধিক আইন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।
পরদিন দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আইন কর্মকর্তা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তিনি (আইনমন্ত্রী) দেখবেন বলে জানান। একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এমরান কোনো একটি পক্ষকে খুশি করতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নেই। এটি করতে পারে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চমতলায় এমরানের কক্ষের সামনে থাকা নেমপ্লেট খুলে ফেলেন কয়েকজন আইন কর্মকর্তা। একইদিন আইন কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি দেয় কার্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল এমরানের নিয়োগ বাতিল করে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলো।
আপনার মতামত লিখুন :