আমেরিকায় বৈধ ভাবে আসুন, সত্য তথ্য দিন–রাজু মহাজন


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৫, ২০২৩, ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ /
আমেরিকায় বৈধ ভাবে আসুন, সত্য তথ্য দিন–রাজু মহাজন

ওহাইও সংবাদ : কোন কোম্পানি যখন কোন ব্যক্তির জন্যে গ্রীনকার্ডের আবেদন করে, তখন সেই কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হয় তারা স্থানীয় যোগ্য লোক পাচ্ছে না। পাচ্ছে না বলেই  একজন বিদেশীকে নিয়োগ দিতে চায়। এজন্যে সেই কোম্পানি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সার্চ দেয়। ঠিকমতো সার্চ না দিলে, কিংবা অদক্ষ মানুষকে ঠিক করলে অনেক সময় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। USCIS মূলত একটা সরকারী অফিস, এখানে বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করে। USCIS’র মূল কাজ হল আমেরিকার ইমিগ্রেশন সম্পর্কে দেখভাল করা। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আমেরিকাতে কোটাভিত্তিক গ্রিনকার্ড দেয়া হয়। কতোজন মানুষ গ্রিনকার্ড পাবে সেই ডকুমেন্ট ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রতি মাসে প্রকাশ করে, এটাই ভিসা বুলেটিন নামে পরিচিত। আপনারা নিয়মিত ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা বুলেটিন ফলো করতে পারেন। অভিবাসন নিয়ে এমন বিস্তারিত কথাগুলো বলেছেন এটর্নি রাজু মহাজন।

গত বৃহস্পতিবার ১৩ জুলাই প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় সম্প্রচার “টক অফ দ্য উইক” অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এটর্নি রাজু মহাজন। তিনি “রাজু মহাজন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস”র প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান এটর্নি। বর্তমানে বাস করছেন যুক্তরাষ্টের ম্যারিল্যান্ডে।

একজন এটর্নি মানেই আমাদের আশ্বাস, কারণ একজন এটর্নি আমাদের আইনি পরিষেবা প্রদান করেন। বিভিন্ন আইনি বিষয়ে ব্যক্তি, ব্যবসা বা সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করে সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাঁরা। কোন ধরনের LAW নিয়ে সার্ভিস প্রদান করে থাকেন সে সম্পর্কে রাজু মহাজন জানান, তিনি মূলত ইমিগ্রেশন ল সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে থাকেন। আইনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে  ইমিগ্রেশন আছে, এমপ্লয়মেন্ট, ফ্যামিলি, ইনভেস্টমেন্ট বেসড, স্টুডেন্ট ভিসা সহ সব ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করেন তিনি। ভিজিট ভিসায় অনেকেই এখানে এসে স্থায়ী ভাবে থাকতে চান। বৈধ উপায়ে কিভাবে থাকতে পারেন জানতে চাইলে রাজু মহাজন বলেন, “আমেরিকায় ২৬-২৭ ধরনের ভিন্ন উপায় আছে গ্রীন কার্ড পাওয়ার। যা সবার ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর নির্ভর করে। যারা B-2 কিংবা ভিজিট ভিসা নিয়ে আসে তাদের একটা লিমিটেশন থাকে। ছয় মাসের বেশী আমেরিকায় থাকা যাবে না। কিংবা আমেরিকায় বসে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে। কেউ যদি খুব ভালো শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী হয়, কিংবা কোন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত, তাহলে তারা EB-1 ক্যাটাগরিতে আবেদন করে পুরো পরিবারসহ গ্রীনকার্ড নিয়ে আমেরিকায় আসতে পারবেন। যদি কেউ ভালো ছাত্র হয়, প্রচুর গবেষণাপত্র থাকে, স্কলারশীপ পেয়ে থাকে, তবে সে  NIW’র মাধ্যমে আবেদন করে আমেরিকায় থেকে যেতে পারবে। EB-3র আনস্কিল্ড বা অদক্ষ ক্যাটাগরিতে আবেদন করা যেতে পারে, সেখানে সময় ২-৩ বছর লেগবে। ট্যুরিস্ট ভিসা হচ্ছে B-2 ক্যাটাগরির, ব্যাক্তিগত ভাবে, পারিবারিক কারণে, দর্শনীয় স্থান দেখার ইচ্ছার কারণে আমেরিকায় আসতে পারেন।

প্রশ্ন রাখা হয়, ভিজিট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে কিভাবে ওয়ার্ক ভিসাতে কনভার্ট করা যায়? উত্তরে রাজু মহাজন জানান, “B-1, B-2 ভিসায় থাকা অবস্থায় কেউ চাকরী খুঁজতে এবং ইন্টারভিউ দিতে পারবে কিন্তু কাজে জয়েন করতে পারবে না। কোন কোম্পানীতে ঢুকতে হলে তাকে B-1, B-2 ক্যাটাগরি থেকে থেকে তিন মাসের মধ্যে যে কোন নির্ধারিত ওয়ার্ক ভিসায় পরিবর্তিত হতে হবে। স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস পেতে হলে তাকে অবশ্যই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের I-20 থাকতে হবে। কোন ফান্ড না থাকলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বছর পড়াশোনার খরচ এবং ওই শহরে এক বছর থাকার খরচ নিজ একাউন্টে কিংবা বাংলাদেশের কারো একাউন্টে কিংবা আমেরিকায় বসবাসরত যে কোন সিটিজেনের স্পন্সরশীপ থাকতে হবে। এই স্পন্সরশীপের ডকুমেন্ট, I-20 নিয়ে B-2 থেকে F-1’ র জন্য আবেদন সম্ভব। পূর্বে সময় লাগতো এক বছর, ইদানিং প্রিমিয়াম প্রসেস চালু করার কারণে ২-৩ সপ্তাহই যথেষ্ট বলে তিনি জানান।

“স্টুডেন্ট ভিসা’ থেকে কোন ভিসার মাধ্যমে গ্রীন কার্ড পাওয়া যায়?” রাজু মহাজন জানান, “স্টুডেন্ট ভিসা থেকে তিনটা রাস্তা খোলা আছে। পাশ করার আগে কিংবা পরে NIW(National interest weaver)র মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। এর বিশেষ রীতি হচ্ছে আবেদনকারীকে আমেরিকার কাছে প্রয়োজনীয় হতে হবে। এর জন্যে ভালো প্রোফাইল এবং মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা জরুরী। তাছাড়া রেগুলার EB-2’র জন্যে তাকে একটা জব পেতে হবে, এমপ্লয়ারের মাধমে আবেদনপত্র করতে হবে। এই প্রসেসে সময় বেশী লাগলেও সব খরচ কোম্পানি বহন করে। শেষ উপায় হচ্ছে EB-3’র জন্য আবেদন করা, এজন্যে আবেদনকারীকে আসস্কিলড হতে হবে। অনেক এজেন্সী আছে যারা চাকরী জোগাড় করে দেবে, সেই জবের মাধ্যমে গ্রীন কার্ড সম্ভব। এই প্রসেস বেশ লম্বা এবং ব্যায়বহুল।

অনেকের ধারনা নির্দিষ্ট স্টেট থেকে এসাইলাম আবেদন করলে সেটা আপ্রুভড হয়। এর সত্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই ধারনা সত্যি নয়, আমেরিকায় ইমিগ্রেশন ল সব স্টেটে একই থাকে। তবে বড় শহরে প্রচুর এপ্লিক্যান্ট থাকায় কাজের প্রেশার  অনেক বেশী, তাই সময় বেশী লাগে।

কারো কেস USCIS এ  দীর্ঘদিন আটকে থাকলে তারা কীভাবে লিগ্যাল সার্ভিস পেতে পারেন ? এর জবাবে রাজু মহাজন বলেন,  আবেদনটা ভালো ভাবে সম্পন্ন হতে হবে, USCIS নিয়মিত ভাবে ফর্ম ও ফি চেঞ্জ করে। সঠিক ফর্ম যদি সঠিকভাবে ডকুমেন্ট সহ সঠিক ফি প্রদান করে জমা দেয়া হয় তাহলে ফাইল ফেরত আসবে না। এম্বেসীতে অনেকদিন ধরে আবেদনপত্র ঝুলে থাকলে স্থানীয় কংগ্রেসম্যান বা সিনেটরের অফিসে যোগাযোগ করা যায়। তারা ওই কেসের নিউ আপডেট জানতে চাইবে, এবং কেসটা তাড়াতাড়ি হবে। আমেরিকায় দুইটা প্যারালাল গভর্নমেন্ট সিস্টেম আছে, ফেডেরাল এবং স্টেট। অবশ্যই ফেডেরাল কংগ্রেসম্যান অথবা সিনেটরের  অফিসে তদন্ত করতে হবে। “রিট অফ ম্যান্দামাড্স’” অর্ডার সম্পর্কে রাজু মহাজন বলেন, “এটার কোন নেগেটিভ এফেক্ট নেই। আমেরিকা আইনের দেশ, এখানে আইনের আশ্রয় নেয়া খারাপ কিছু না বরং এটা প্রমাণ করে যে মানুষ আইনে বিশ্বাসী এবং কোর্টের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন।

দর্শকদের প্রশ্ন ছিল, “B-2 মাল্টিপল ভিসায় এসে অনেকেই নিয়ম মানেন না। ছয়মাস পর তারা থেকে যান, এসাইলামের জন্যে আবেদন করেন, কাজ করতে চান, তাদের জন্যে ওয়ার্ক পারমিটের ব্যাবস্থা কি? উত্তরে তিনি জানান, “B-2 কাজের অনুমতি দেয় না। কিন্তু এসাইলামের জন্যে আবেদন করার পাঁচ মাস পর কাজের অনুমতির জন্যে আবেদন করা যাবে। স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে ক্যাম্পাসে কাজের অনুমতি দেবে, আর্থিক কষ্ট দেখালে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজের অনুমতিও দেবে। আর H-1 নিজেই একটা ওয়ার্ক ভিসা।
অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্যবহুল আলোচনার মাধ্যমে সেদিনের “টক অফ দ্য উইক” অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সোহানা নাজনীন, আর কারিগরি সহায়তায় ছিলেন এইচ বি রিতা। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার এই টক শো প্রতি বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় রাত নয়টায় সরাসরি লাইভ সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। সূত্র: প্রথম আলো।