ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, জীববিজ্ঞানী ডক্টর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন 


ওহাইও সংবাদ প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৫, ২০২৩, ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ /
ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, জীববিজ্ঞানী ডক্টর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন 

গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা : সারওয়ার খান 

ডক্টর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন একজন ভাইরোলজিষ্ট ও ইমিউনোলজিষ্ট, জিন থেরাপি নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ একনিষ্ঠ নিবেদিত প্রান জীববিজ্ঞানী। 

তিনি একজন দক্ষ মলিকিউলার ভাইরোলজিষ্ট,  যিনি ১৫ বছরেরও অধিক সময়কাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষনা কেন্দ্রে কাজ করেছেন।  Massachusetts Institute of Technology (MIT) থেকে ভাইরোলজি গবেষনায় প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হয়েছেন।  তার গবেষনা লব্ধ জ্ঞান Flavi (Dengue, Zika, Yellow Fever), Bunya (Rift Valley), Lenti(HIV), Herpes, Parvo, Corona and Influenza Virus সহ উদীয়মান ভাইরাল সংক্রমন প্রতিরোধে উল্লেখ যোগ্য অবদান রেখেছে।

ডক্টর সাইফুদ্দিন ভাইরোলজি, ইমিউনোলজি, বায়োডিফেন্স এবং সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ।  ল্যাবরেটরী প্রযুক্তি, মাইক্রবায়াল চরিত্রায়ন সহ এন্টি ভাইরাল, জিন থেরাপি এবং ভ্যাকসিনগুলির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মূল্যায়নে নেতৃত্বের দক্ষতার জন্য তিনি সুপরিচিত।  বিশেষ করে হেরিডিটারি নিউরো মাসকুলার এবং চক্ষু রোগের জন্য জিন থেরাপি উন্নয়ন কৌশল নিয়ে ক্লিনিক্যাল অপারেশন ও  FDA Regulatory Affairs সহ বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের সাথে শক্তিশালী ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিত।  CONRAD এ থাকা কালীন তিনি বহু মিলিয়ন ডলার এর তহবিল পেতে এবং বেশ কয়েকটি অ্যান্টি ভাইরাল (TMC120, UC781, MIV150 ও TFV জেল) কে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এগিয়ে নিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন।  ডক্টর সাইফুদ্দিন NIH অনুদান প্রস্তাবের একজন দক্ষ পর্যালোক ছিলেন।  তিনি সিগমা Xi সায়েন্টিফিক সোসাইটি দ্বারা বিশিষ্ট গবেষক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। তার কর্ম পরিধির বিশেষ দিকগুলো হলো জিন থেরাপি, ইমিউনোলজি, HIV/AIDS এবং জীববিজ্ঞানের ক্লিনিক্যাল বিকাশ।

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১৯৬৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করলেও বেড়ে উঠেন রানিশংকৈল দিনাজপুরে।  নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পরিজন নিয়ে পিতা মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন রানিশংকৈল দিনাজপুরে যেয়ে বসতি গড়েন।  ভর্নিয়াহাট প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করে ধর্মগড় ইউনিয়ন হাই স্কুল থেকে ১৯৮০ সালে এস.এস.সি পাশ করেন।  দিনাজপুর শহরের কাদেরবক্স মেমোরিয়াল থেকে ১৯৮২ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি. উত্তীর্ন হন। 

১৯৮৩ তে ভর্তি হলেন Bangladesh Agriculture University, Mymensingh এ।  বিভিন্ন প্রতিকুলতা পেরিয়ে অনার্স শেষ করে ১৯৮৯ সালে Virology তে ১ম স্হান নিয়ে মাষ্টার্স শেষ করেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্হিতির কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়া হলো না। ১৯৮৮ সালে টেকনিক্যাল বিসিএস পরীক্ষায় যোগ্যতার সাথে উত্তীর্ন হয়েও সরকারী চাকুরীতে যোগ দিলেন না। একান্ত ইচ্ছা, উচ্চতর শিক্ষা শেষে কর্মজীবন শুরু করা। সেসময় ইউনিসেফ এর সহায়তায় রানীক্ষেত রোগের গবেষনায় ভ্যাকসিন তৈরির প্রজেক্টে Scientific Officer হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। স্মৃতিচারনে শিক্ষক আব্দুল জলিল সরকার এর অনুপ্ররনার কথা স্মরন করলেন। 

শিক্ষক ফজলে রাব্বি চৌধুরীর অনুপ্রেরনায় ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন (UGC) এর পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে কমনওয়েলথ্ স্কলারশিপ পেয়ে ভাইরোলজিতে পিএইচডি করার সুযোগ পেলেন নিউজিল্যান্ডে।  ১৯৯২ সালের মে মাসে  অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন সিঙ্গাপুর হয়ে অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড।  

Virology বিভাগীয় প্রধান Collin Wilks এর সার্বিক তত্বাবধানে Virology তে গবেষনার কাজ শুরু করলেন। কমনওয়েলথ্ স্কলারশিপ এর প্রাপ্ত অর্থের পরিমান গবেষনা ও জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল।  Human Hepatitis A virus infection এর Model নিয়ে গবেষনা থিসিস যথা সময়েই শেষ হলো। পোষ্ট ডক্টরাল অফার পেলেন সিডনী বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকার MIT থেকে। আমেরিকা আসবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৮ এর জুলাই এ সরাসরি নিউজিল্যান্ড থেকে আমেরিকার বোষ্টনে  MIT এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। MIT তে এসে Division of Comparative Medicine এ অধ্যাপক James Fox এর তত্বাবধানে গবেষনা শুরু করেন। 

ডক্টর সাইফুদ্দিন ক্যামব্রিজ শহরে অবস্হিত MIT and Harvard যৌথ প্রকল্পের অধীনে HIV নিয়ে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে ২য় পোষ্ট ডক্টরাল করার জন্য Chicago Rush University Medical Center এর Immuno Microbiology Department এ যোগ দেন এবং অল্প কিছুদিন পর Assistant Professor হওয়ার সুযোগ পান। এসময়েই J1 ভিসা পরিবর্তন করে গ্রীন কার্ড ধারী হলেন। Chicago তে ৫ বছর কাটিয়ে ২০০৬ এর জুলাই এ Eastern Virginia মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে Associate Professor হিসাবে যোগ দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে CONRAD গবেষনা প্রতিষ্ঠানে Head of Virology হিসাবে HIV Disease প্রতিরোধের উপর গবেষনা করেন। 

ডক্টর সাইফুদ্দিন Principal Scientists হিসাবে National Center for Bio Defence এ এবং George Washington University তে কর্মরত ছিলেন। জিন থেরাপি সংক্রান্ত গবেষনা পরিচালনার জন্য ২০১৯ সালে Sarepta Therapeutics ও Nationwide Children Hospital এর যৌথ কার্যক্রম শুরু করতে সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে ডক্টর সাইফুদ্দিন কলম্বাস ওহাইও তে স্বপরিবারে স্হানান্তরিত হন। পরবর্তীতে Global Virus Biotec নামে জিন থেরাপি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে নিজস্ব কনসাল্টিং ফার্ম গড়ে তুলেন। বর্তমানে জিন থেরাপি নিয়ে Galveston, Texas ও Ohio State University এর সাথে যৌথ গবেষনায় নিয়োজিত আছেন। ডক্টর সাইফুদ্দিন এর লেখা ৬০ এর অধিক গবেষনা পত্র বিভিন্ন National and International Scientific Journal এ প্রকাশিত হয়েছে। 

স্ত্রী মিসেস সাজেদা বেগম ও বালুবাড়ি, দিনাজপুরের মেয়ে। একাউন্টিং এ অনার্স করে পরবর্তীতে MBA করেছেন। সাজেদা বেগমের বাবা ছিলেন ইনকাম টেক্স লইয়ার। সেই ধারাবাহিকতায় সাজেদা বেগম ও বাংলাদেশে থাকাকালীন NBR এর সার্টিফাইড ট্যাক্স লইয়ার হিসাবে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ডক্টর সাইফুদ্দিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ২০১১ সালে চলে আসেন আমেরিকায়। দুই মেয়ে সাবিরা রায়া সাইফুদ্দিন ও সারিদা সাইফুদ্দিন কে নিয়ে সাজেদা বেগম ও ডক্টর সাইফুদ্দিন এর সুখী সংসার।